পৃথিবী ধ্বংশশীল। সৃষ্টির স্বাদ যেই নিয়েছে, মৃত্যুর স্বাদও তাকে নিতে হবে। তবে অনেক নিয়ম-শৃঙ্খলা ও বিধি-নিষেধ প্রত্যেককে মেনে চলতে হয়। নিয়ম-শৃঙ্খলা ও বিধি-নিষেধের শৃঙ্খলিত জীবন পশুত্বের অধম গুণের বহিঃপ্রকাশ হতে মুক্তি দে। জাগ্রত হয় মনুষ্যত্ববোধ, মায়া-মমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ। একের প্রতি অন্যের বিশ্বাস জন্মে। কিন্তু কালের বিবর্তনে অতি আধুনিকতার ছোঁয়ায়, অতিরিক্ত চাহিদা আজ বিশ্বকে জুঁয়ার মাঠে নামিয়েছে। কেউ বিবেকের কাছে দায়ী নয়। ভালবাসা ও প্রেম-প্রীতি মঞ্চ নাটকের মতো ম্যাকআপ করেছে। সময় চলছে নিজ ধারায়। আমরা হেরে যাচ্ছি বিবেকের কাছে। গ্রামের সাধারণ মানুষগুলোর জীবন ধারায় সরলতা আর বৈচিত্র্যের ছাপ ছিলো। সূর্য উঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে লাঙ্গল গরু নিয়ে মাঠে নেমে পড়ত। দুপুরে ক্লান্ত দেহে একটু গা এলিয়ে দেওয়া ছিল নিত্য স্বভাব। সন্ধার পর পাড়ায়-পাড়ায় বসতো গল্পের আসর। সারাদিনের ক্লান্তি কোথায় যেন উদাও হয়ে যেত, ফিরে পেত চাঙা মনোবল। হয়তো মাঝে-মাঝে হালকা বিস্কিট বা মুড়ি-মোলার সাথে চা অথবা গ্রাম্য বউয়ের হাতের পিঠা পুলি আড্ডাকে আরো প্রাণবন্ত করতো। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর মাটির বিছানা ও শীতল পাটির পরশ পেলেই স্বপ্ন রাজ্যে পাড়ি দিতে সমস্যা হতো না। সময়ই হতো না কারো মন্দ নিয়ে ভাবার। একজনের বিপদে অন্যের দৌঁড়ে আসা যেন প্রতিযোগিতার অংশ ছিল। দাওয়াত তো দূরের কথা রোগ-শোকে পাড়া-পড়শিদের সমাগম দেখে মনে হতো যেন মেলা বসেছে। এতো পরিশ্রমী ছিল যে শহর থেকে শহরে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে অসুবিধা হতো না। কিন্তু সেদিন এখন স্বপ্নের দোলনায় ফিরে নতুন অন্যদিন আবির্ভূত হয়েছে। যদিও চাঁদ-সূর্য আগের ধারায় উদিত হয় আবার ডুবে যায়, রাত দিন আগের মতো আবর্তন করে, সমুদ্রের স্রোত জোয়ার-ভাটার টানে ঠিক ঠিক প্রবাহিত হয়। শুধু মানুষগুলো আগের মতো জীবন ধারায় চলমান নয়। সবকিছু মাঠ-ঘাট থেকে ঘরমুখো নয়তো রাডারের ন্যায় বিরামহীন ধাবমান, বিরতির সুযোগ নেই, পিছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। পাশের জগৎটি ও তার কাছে অচেনা। হিংসা-বিদ্বেষ তার মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে। মায়া-মমতা, প্রেম-প্রীতি কাঁচা মালের ন্যায় পাল্লায় উঠেছে। দাম যতো ততো বিনিময় হয়। দান করা হয়েছে লৌকিকতার উজ্জ্বল ছবি। লোক দেখানো চরিত্রগুলো সমাজের ধরাপতি। নরাদম হয়ে আমরা অনুত্তম মানুষের বেসাতি গাই। সব সত্যকে মিথ্যার লেপনিতে ঢেকে দিয়েছি। এক দিন যে যেতে হবে তা পুরোপুরি ভুলতে বসেছি। কুকুরের বুকে মানুষের উষ্ণতা নেয়ার সুযোগ হয়, কিন্তু মানুষের বুকে মানুষের নয়। বিবেক তাড়িত হয়ে অনেক দিন ধরে কিছু লিখবো এমন প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছি, আর ‘অন্য এক পৃথিবী’র অবতাড়নার আশ্রয় নিয়েছি। প্রত্যাশা আমার পাঠকের নিকট কিছুটা হলেও নাড়া দেবে।