লেখকের কথা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এই স্বর্ণোজ্জ্বল সময়ে বাংলাদেশের প্রধানতম স্থলবন্দর বেনাপোল এর ভূমিকা অনন্য ; শুধু এই জন্য নয় যে, এটি প্রধান ও ব্যস্ত ট্রানজিট পয়েন্ট। বাংলাদেশ-ভরত সীমান্তের যশোর জেলার অন্তর্গত এলাকা বেনাপোলের বিরাট ভূমিকা রয়েছে আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। পুরো নয় মাসের পুরোটা সময় পতপত করে উড়তে থাকা বাংলাদেশের পতাকা। হানাদার পাকিস্তানী শত্রু বাহিনীকে জানান দিয়েছে এদেশকে তারা দখল করতে পারবেনা। প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলা হিসেবে যশোর তাই অনন্য এবং এক অনবদ্য অবিস্মরণীয় ইতিহাস। আমেরিকান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের বিখ্যাত যশোর রোড কবিতাটির মতই আজও আমাদের মন প্রাণ জুড়ে যশোর বেনাপোল সড়কটি আবেগের আরেক নাম। আমার জানা মতে, এই বিষয়ে কোন ইতিহাস গ্রন্থ না থাকায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্ত্র কাঁধে তুলে নেবার মতো আজ কলম তুলে নিলাম নিজের হাতে সেই ইতিহাস লিখতে। ইতিহাস সংগ্রহ ও বিশিষ্টজনদের মতামত, সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে আমাকে বেশ শ্রম দিতে হয়েছে। সাক্ষাৎকারগুলো গ্রহণ করতে বারবার ছুটে যেতে হয়েছে সেইসব মানুষদের কাছে ; যা ছিল আমার জন্য কষ্টসাধ্য। তার পরেও আমি আনন্দচিত্তে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিীবিত মন নিয়ে এ কাজ করার চেষ্টা করেছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেনাপোলের বিভিন্ন স্থানের যুদ্ধের স্মৃতি গুলো আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে। যেসব ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা। সেই সব ইতিহাস তাদেরকে উজ্জীবিত করতে পারত, কিন্তু আমরা পারিনি। এ ব্যর্থতা আমাদের। নতুন প্রজন্মের কাছে সেই ইতিহাস পৌঁছে দেয়া খুবই প্রয়োজন। তাই সেই সব দিনের প্রকৃত সত্য ইতিহাস তুলে ধরতেই ‘পতাকার অক্ষত ভূমি’ নামে বেনাপোল সীমান্তের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের এই লেখনী। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য বহুবার তাদের কাছে যেতে হয়েছে। এই নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাসই জানে না। যা খুবই দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের গর্ব , আমাদের চেতনা, ও আমাদের অহংকারের। আশা করি নতুন প্রজন্মের কাছে বেনাপোলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন আশার বাণী হবে। তাদেরকে উজ্জীবিত করে তুলবে। সেখানেই আমি সার্থকতা খুঁজে পাবো।