শৈশব হচ্ছে সারল্যের চাদরে মোড়া রঙিন প্রজাপতির মতো, যে প্রজাপতি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায় ফুলের বনে, রৌদ্রকরোজ্জ্বল শিশির ভেজা ঘাসে, সবুজ গাছের পাতায় পাতায়। জন্মের পরে কথা বলা, হাঁটতে শেখার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় শিশুর কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট; অর্থাৎ, বুদ্ধি, যুক্তি ও আবেগীয় বৃত্তিসমূহের বিকাশ। বয়ঃসন্ধিকালে ব্যক্তির মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয় পড়াশুনা, কাঁচা বয়সের নানা দুরন্তপনা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, খেলাধুলা, ফ্যান্টাসি ও হিরোইজমের প্রতি। কৈশোরের চাওয়া-পাওয়া, যৌন-আকাঙ্ক্ষা ও সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর পারে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য একদিকে যেমন স্বাধীনতা দরকার; অন্যদিকে শৃংখলা ও মূল্যবোধ আত্মস্থ করার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা, নৈতিকতা, ধর্ম, ও সংস্কৃতির পাঠ ও চর্চা। পরিবার ও সমাজ যদি শিশুদের শারীরিক, মানসিক, ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে শিশুরা যে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুত হবে, এটি অনিবার্য। বাংলাদেশে ৫ কোটির অধিক শিশু ও কিশোরের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় শঙ্কিত হবার মতো ঘাটতি আছে। ফলে বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর অপরাধ এবং দেখা দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের হত্যা, চাঁদাবাজি ও টিকটক ভিডিও তৈরির ভয়ংকর সব উপদ্রব। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ৭৮টি, এবং চট্টগ্রামে ৩১টিসহ সারা দেশের শহরগুলোতে কয়েক শ’ কিশোর গ্যাং দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ব্যক্তির জীবনের ওপর শৈশবের অমোচনীয় প্রভাব, এবং অস্বাভাবিক শৈশব কীভাবে একজন ব্যক্তিকে অপরাধী, এমনকি সিরিয়াল কিলারে পরিণত করে, সেটি আলোচিত হয়েছে এ গ্রন্থে। কিশোর গ্যাং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কী সংকট তৈরি করছে এবং সেটি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সামগ্রিক করণীয় কী, সে বিষয়ে আলোচনা আছে গ্রন্থটিতে।
Title
নন্দিত শৈশব এবং বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ ও গ্যাং কালচার