সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক প্লেটো তাঁর প্রামাণ্য সংলাপরাজি (২৭টি) এবং চিঠিপত্রের (৭টি পত্র) মাধ্যমে পৃথিবীকে তাঁর নিজের এবং তাঁর গুরু সক্রেটিসের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ভাবনারাজি দান করে গেছেন। সেইসব চিন্তাভাবনা প্রকাশ পেয়েছে সংলাপের মধ্যকার আলোচনায়, দ্বান্দ্বিকতায়, মীমাংসেয় ও মীমাংসিত উক্তিতে। সেইসব উক্তি নির্বাচন করে, তাদের শিরোনাম নির্ধারণ করে এবং বর্ণানুক্রমে বিন্যস্ত করে উপস্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এই পুস্তকটিকে। প্লেটোর সংলাপরাজি এবং পত্রগুচ্ছ পাঠে দেখা যায় যে, তাঁর ২৭টি সংলাপের মধ্যে ২৬টিরই প্রধান চরিত্র হচ্ছে সক্রেটিস, এবং তাঁর বয়ানেই মূল নাটকীয় আদলে উক্তিসমূহ উপস্থাপন করা হয়েছে। আধুনিককালে এসে প্লেটো-বিশেষজ্ঞগণ পাণ্ডুলিপি বিশ্লেষণ করে প্লেটোর সংলাপসমূহকে মূলত তিন ভাগে, তথা, ‘সক্রেটীয়’, ‘সক্রেটীয়-প্লেটোনীয়’ এবং ‘প্লেটোনীয়’ পর্বে ভাগ করেছেন। বলা হচ্ছে যে, প্রথমভাগে, তথা, সংক্রেটীয় সংলাপে কেবল সক্রেটিসের চিন্তার স্ফুরণ ঘটেছে; দ্বিতীয় ভাগে যদিও সক্রেটিসের চিন্তা বীজ-চিন্তা হিসেবে কাজ করেছে, তাতে প্লেটোর ভাবনারও মিশেল ঘটেছে; তৃতীয় ভাগটি মূলত প্লেটোর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। আমরা সেভাবেই এই পুস্তকটিতে উক্তিসমূহ বিন্যস্ত করেছি। বিশ্বের দর্শনচিন্তায় সক্রেটিস ও প্লেটোর ভাবনারাজি বিগত আড়াই হাজার বছর চিন্তাশীল মানুষকে আলোড়িত করেছে, এখনও করছে। তাঁদের উক্তিসমূহ পাঠ করা যেমন শিক্ষার বিষয়, তেমনই আনন্দেরও; বাংলাভাষায় সেসব হীরকখণ্ড উপস্থাপন করতে পেরে আমরাও আনন্দিত ও গর্বিত।
১৯৫৩ সালের ১ লা অক্টোবর নরসিংদি জেলার বদরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে নীতি বিশ্লেষণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশের সচিব পদ থেকে অবসর লাভ করেন (সর্বশেষ দায়িত্ব পালন-বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক, ম্যানিলা)। তাঁর আগ্রহের বিষয় বিজ্ঞানের দর্শন ও তুলনামূলক মিথলজি। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত পুস্তুক : প্লেটোর রিপাবলিক-এর ভূমিকা; রবীন্দ্রনাথ : কার্ল পপারের নির্বাচিত দার্শনিক রচনা; প্লেটোর আইনকানুন; রিপাবলিক, সিম্পেজিয়াম, রাষ্ট্রনায়কসহ প্লেটোর ১৭টি সংলাপের অনুবাদ এবং দর্শনের আরো কিছু ধ্রুপদী গ্রন্থ।