কবিতা এক আদিম সভ্যতা এই কবিতাগুচ্ছ আমার কাছে এসেছিল এবারের শীতে। যেমন রবিশস্যের মাঠজুড়ে নানান জাতের সবজি আসে। কেউ কেউ তা উপড়ে এনে ভ্যানে করে বিক্রি দেয়। আমি এদেরকে সবজিবাগান থেকে কুড়িয়ে এনেছি। আর কুড়িয়ে এনে কেন তুলে দিয়েছি মাটির পিরিচে, মানুষের খাদ্যতালিকায়? তার কোনও অভিপ্রায় আছে কিনা, তা বোধ হয় এই কবিতার পাঠকগণ ভালো বলতে পারবেন। যদিও শীতে শীতার্তের দরকার গরম কাপড়। এ কবিতা কি শীতের সবজির মলাট হয়ে গরম জামাকাপড় পরতে চায়? উঁচু নিচু ভেদ চায়? সাম্য? ব্রæকলির দাম বেশি না ফুলকপির দাম বেশিÑএই জিজ্ঞাসার মীমাংসা চায়? এরকমের বিষয় নিয়ে এরা আমার কাছে এসেছিল। আর কিছু প্রশ্ন রেখে গেলে, আমার মধ্যে যে রসায়ন বরাবরের মতই বুদ্বুদ তৈরি হয়েছিল, এরা তারই আত্মসাক্ষ্য দেয়, দেবে। পৃথিবীতে সবাই খাবে, বুভুক্ষু থাকবে না। শ্রমের বৈষম্য নয়, শ্রম শ্রমই। ধর্মমতেরও বৈষম্য নয়। ধর্ম সবার আছে। সবার ধর্ম সমান। একই স্রষ্টা সবাইকে নির্মাণ করেছেন। সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই। মানুষ মানে মানুষ। ছোটো মানুষ, বড়ো মানুষ, উন মানুষ, প্রতিবন্ধী মানুষ বলে কিছু নেই। পাখি মানে পাখি, ছোটো পাখি আর বড়ো পাখি আর উনপাখি আর প্রতিবন্ধী পাখি বলে কিছু নেই। আমার কাছে, কবিতাজন্মের এও একটি আদি কারণ বলে মনে হয়। সে কারণে এখনও পৃথিবীতে কবিতা রচিত হয়। আজ যে কবিতা রচিত হলো, এদের উদ্দেশ্য একটাইÑবনে পাখি ও পশু এবং পৃথিবী সংশ্লিষ্টরা থাকবে নিঃসংকোচে। মনে ও বনে এরা প্রত্যেকেই থাকবে সংকোচহীন। অনেক তো হলো--আমি চাই সাম্য, আমি চাই বৈষম্যহীন এক নতুন পৃথিবী। (আমি কিন্তু শুনেছি, পৃথিবীর মত আরও পঞ্চাশটি পৃথিবীর সম্ভাবনার কথা) তারপর আমি আর কবিতা লিখব না। নতুন কবি এসে লিখবে অন্য কোনও পৃথিবীর মানে, আরেক পৃথিবী সৃষ্টির নতুন সম্ভাবনা, মানে কবিতা। তাই এ শীতের সবজিগুচ্ছ ভুলে থাকার জন্য নয়, ঝুলে থাকার জন্যও নয়--কবিতা এক আদিম সভ্যতা। আলফ্রেড খোকন ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ঢাকা, বাংলাদেশ