‘পথে পথে ক্যাকটাস’ মোহাম্মদ আনোয়ারের কাব্যগ্রন্থ। মোহাম্মদ আনোয়ার কবিতার পথে নতুন পর্যটক না হলেও অনেক বেশি পুরনো একথা বলারও অবকাশ নেই। তবে সন্দেহাতীত বলা যায় তাঁর কবিতার শ্রী-সৌকর্য একবারও মনে করিয়ে দেয় না তিনি কেবল শুরু করেছেন শিল্পের বাল্য শিক্ষাপাঠ। সংহত চেতনাবোধ, গভীর কাব্যমনস্ক ধ্যান অকপটে মোহাম্মদ আনোয়ারের শক্তিমত্তার সংবাদ দেয়। কবিতা ব্যক্তিসত্তা ও সমষ্টিসত্তা, একই সাথে সমাজ-দেশ -সভ্যতা, প্রকৃতির ভেতর বাহিরকে বহুমাত্রিক রঙের খেলায় উদ্ভাসিত করে। মোহাম্মদ আনোয়ারের সেই সচেতনা তাঁর কবিতার পানসিকে নগরে বন্দরে গাঁয়ের নিস্তরঙ্গ নদীর ঘাটে ঘাটে নোঙর করায়। তবে কোথাও স্থিতু হয়ে থাকে না। ফলশ্রুতিতে তাঁর কবিতার ফ্লেভারেও আছে ভিন্ন ভিন্ন রসের স্বাদ। ‘পথে পথে ক্যাকটাস’ কবিতা গ্রন্থের কবিতাগুলো সেই সত্যতার সুদৃঢ় প্রমাণ দেয়। কবি বিশ্বাস করেন মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বোধ রয়েছে, দায়বোধ রয়েছে পর্যুদস্ত মানবতা উদ্ধারের। সঙ্গতই তাঁর কবিতায় ধ্বনির প্রতিধ্বনি যথার্থÑ ‘অসুস্থ মানবতা ফিরে পাক সুঠাম স্বাস্থ্য/ ফুল ফোটা বড়কথা নয় আসুক বসন্তকাল/ প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে চুয়ে চুয়ে পড়ুক হৃদয়/ঝর্ণা ধারায় ভরে যাক অগুনতি নদী।’ একই কেলাসনে নির্মিত মোহাম্মদ আনোয়ারের অনেকগুলো কবিতা ‘পথে পথে ক্যাকটাস’ কাব্যের ঔজ্জ্বল্যকে উচ্চকিত করেছে। কাব্যের শিরোনামের কবিতা মনে করিয়ে দেয় তাঁর গভীর জীবনবোধের কথা। ফলশ্রুতিতে বিভ্রান্ত মানুষ আর সভ্যতার দৈন্যদশা তাঁর কবিতায় প্রতিপাদ্য হয়ে উঠে অসাধারণ শিল্পমহিমায়Ñ ‘কী সুন্দর চোখের অন্ধ মানুষ!/অন্দরমহলে রেখেছে বিস্তর বিধ্বংসী কেমিক্যাল/মাটি ও মানুষের প্রেম কেড়ে নেয় তারা...’ হালে কবিতায় নৈরাজ্য। মোহাম্মদ আনোয়ার সেই নৈরাজ্য থেকে তাঁর কাব্যসত্তাকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো আগলে রেখে অনুসন্ধিৎ দৃষ্টি জাগিয়ে হাঁটছেন বিশুদ্ধ শিল্পের ভুবনে। এখানেই তিনি স্বতন্ত্র- একথা দ্বিধাহীন বলা যায়। ‘পথে পথে ক্যাকটাস’ কাব্যরসিকদের কাব্যতৃষ্ণা নিবারণে সক্ষম হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
কবি মোহাম্মদ আনোয়ার। পিতা মরহুম নূর মোহাম্মদ, মাতা মরহুমা আয়াতুন নেছা। তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামে ৫ জানুয়ারি ১৯৭০ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী।