অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসীয় পদার্থ বাতাসের উপাদান। কবিতায় প্রতীকী বাতাসেও এরকম কাব্যিক উপাদান থাকে। দুষ্টু বাতাস, মিষ্টি বাতাস, তপ্ত বাতাস, ঝড়ো বাতাস, সামুদ্রিক বাতাস, বিরহী বাতাস, বেগানা বাতাস-এ ভাবে বিশেষ্যের সাথে বিশেষণ যুক্ত করে অদৃশ্য বাতাসকে বহুমাত্রিক করে তোলা যায়। . কবি আকাশ মামুন তাঁর ‘বেগানা বাতাস’-এ যাপিত জীবনের নানাদিক নান্দনিক ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ফলে বাস্তবের সাথে মিলে ঋণাত্বক ‘বেগানা’ হয়ে উঠেছে পজেটিভ পয়েম। এখানেই আকাশ কবিতায় খুলে দিয়েছেন নিজস্ব আকাশ। সেখানে তাঁর কবিতার নভোমন্ডল, সৌরজগৎ, গ্রহ, নক্ষত্র, মেঘ, রোদ, জোছনার মতো বিচিত্র বিষয়ের সমন্বয় ঘটে। যেমন- এখন আর বুলবুলি ধান খায় না- বর্গিও আসে না/ ঘরের কোণে পোষা সাপ দুধ-কলা খেয়ে যায়। অথবা - কাল রাতে শুনলাম চাঁদ আত্মহত্যা করেছে।/ আত্মহত্যা নোটে লিখে গেছে তার মৃত্যুর জন্য এক মন্ত্রী দায়ী।/ সুরতহাল প্রতিবেদনে এসেছে মৃত্যুর আগে সে গর্ভবতী ছিল। এই ধারাবাহিকতায় ‘ঘুরমুখো হাটুরে, মৃত্যু, মৃত্যুর মিছিল, মৃত্যু অথবা কারাগার, জীবনের ইন্ডিকেটর, হাট, ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মা, ষোল আনাই মিছে, দিনমজুর, উন্নয়নের রংফর্সাকারী ক্রিম, রাষ্ট্র একটা করাত কল, বেগানা বাতাস’ শীর্ষক কবিতাগুলোতে সমাজের অবক্ষয় উপস্থাপিত হয়েছে। . আকাশের আগের দু’টি কবিতা বই ‘মেয়াদোত্তীর্ণ রাজমহল’ এবং ‘শিল্পিত মিথ্যার প্রেসনোট’ নামকরণ থেকে একই সুর পাওয়া যায়। এই গ্রন্থে আকাশের কবিতায় নিজস্বতা আছে। যদিও ‘মাতাল ঘুঘু’ পড়ে শামসুর রাহমানের ‘এই মাতোয়ালা রাইত’ কবিতার কথা মনে পড়ে গেলো। যদিও প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তবু ঢাকাইয়্যা ভাষার সাদৃশ্যেই হয়তো সমান্তরাল। . আকাশ শুধু সমাজ সচেতনতামূলক কবিতাই লিখেন না। প্রেমের কবিতাতেও তাঁর সিদ্ধহস্ত। দু’ এক টুকরো উদাহরণ দেয়া যাক। একটা রামধনু মাটিতে পড়ে/ কতগুলো রাস্তা হয়ে যায়/ সব রাস্তা তোমার বাড়ির সামনে গিয়ে/ বক হয়ে উড়ে যায়Ñ কিংবা গুহা ছাড়া নাকি ইবাদত পূর্ণ হয় না/ আমি গুহা খুঁজছি/ তোমার নবুয়ত পেতে অথবা- ‘আমাকে কেন তুমি ডাক না আজানের মতো কোন কিন্নরী সুরে?’ . লক্ষ্য করলে দেখা যাবে-পরাবাস্তবে রঙধনু রাস্তা হয়ে যাচ্ছে, দ্বৈত চরিত্রে ক্যাকটাস যত্ন নিলেও মরে যাচ্ছে আবার যত্ন না পেয়েও ফুল দিচ্ছে এবং প্রেমের প্রার্থণা অর্থাৎ ইবাদতের জন্য গুহা-নবুয়ত-আজান ইত্যাদি আরবি শব্দচিত্র কবিতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। এখানেই আকাশের নিজস্বতা। . সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল টরন্টো, নভেম্বর ৬, ২০২২