ফ্রান্সের বিলাসবহুল এক ফ্ল্যাটের বেলকনিতে বসে আছে অয়ন্তি। হাতে এক টুকরো চিরকুট। কিয়ৎকাল বসে থেকেও সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে। তার হাত কাঁপছে শব্দগুচ্ছ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কে বিচরণ করছে নানান দুশ্চিন্তা। অথচ আবরণ নামক পুরুষটির প্রতি সে ভীষণভাবে দুর্বল, ভীষণ। তাছাড়া কতকালই বা লুকিয়ে রাখবে তার অব্যক্ত প্রণয়ের কথা। এবার অন্তত মানুষটাকে জানানো দরকার, বোঝানো দরকার, তার ভালোবাসায় সেও ভালো থাকতে চায়। প্রাপ্তি হিসেবে পেতে চায় ওই মানুষটার চিরসঙ্গ। এসব ভেবে অয়ন্তি দ্বিধা ঝেড়ে আনমনে লিখল, “আমার অর্ধভেজা প্রহরের ঊষালগ্ন হবেন? যার উষ্ণতায় তরঙ্গ হব আমি। হবেন আমার অর্ধভেজা শহরের তেজস্বী রবিশশী? যার ঊর্জস্বল বক্ষে আমার স্থান সবার ঊর্ধ্বস্থিত। যেখানে হবে আমার নিরাপত্তা সমেত একটুকরো প্রশান্তির আবাস। হবেন আমার কষ্টেভেজা সফরসঙ্গী? যার বিশ্বস্ত স্কন্ধে আমার ঠাঁই হবে আমরণ।” এইটুকু লিখেই তার হাত আপনাআপনি থেমে গেল। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল চিরকুটখানার দিকে। তার ওষ্ঠে ফুটে উঠল মলিন হাসি। নির্ঘুম নেত্রজোড়া ভিজে উঠল এক বর্জিত ব্যথায়। সে কলম ফেলে লিখার ওপর আলতো করে হাত বুলিয়ে নিল কয়েকবার। এমন ধরনের চিরকুট অনেক বারই লিখেছে, তবে মানুষটাকে দেওয়া হয় নি একটিবারও। এটাও বোধহয় দেওয়া হবে না। প্রত্যেকবারের মতোই হয়ত এটারও ঠাঁই হবে ময়লার ঝুঁড়িতে নতুবা পুরনো ডায়েরীর ভাঁজে। তবে এবার সে মনস্থির করেই ফেলেছে চিরকুটখানা পাঠাবে আবরণের কাছে, তবুও কেন জানি একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে! “প্রত্যেকবারের মতো আদৌ এটা পৌঁছাবে তো কাঙ্ক্ষিত মানুষটার কাছে না-কি পুনরায় বিশ্বাস ভঙ্গ হয়ে ঠকে যাবে মুখোশধারী শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে?”