আন্তোনিও গ্রামসি তাঁর প্রিজন নোটবুকসে লিখেছিলেন, ‘পুরাতন মরে যাচ্ছে কিন্তু নতুন জন্ম নিতে পারছে না।’ পুরাতন মরে যাবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু নতুনের জন্ম নিতে না পারা স্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিকতার প্রকাশ ঘটে বিস্ফোরণে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই বিস্ফোরণ প্রকাশ পায় গণ-অভ্যুত্থানরূপে। যে কোনো যুগের স্বৈরাচারী শাসক জনগণের অভ্যুত্থান ও আন্দোলন বিরোধী। কেন বিরোধী তার হিসাব সহজ। স্বৈরাচারী শাসকরা ক্ষমতার চেয়ারে থাকেন জনস্বার্থের প্রতিনিধি বলে। কিন্তু জনস্বার্থ ও স্বৈরাচারীর স্বার্থ এক হওয়া বিরল। কাজেই দ্বন্দ্ব অনিবার্য। দ্বন্দ্বের একদিকে স্বৈরাচারী শাসক অন্যদিকে জনতা। স্বৈরাচারীর হাতে থাকে ক্ষমতার দণ্ড। জনতার হাত খালি। এই খালি হাতগুলোর একটা যখন আরেকটার হাত ধরে তখনই নতুন ইতিহাসের জন্মপ্রক্রিয়া শুরু হয়। নতুনের কেতন ওড়ে। দার্শনিক আলাঁ বাদিউ তাঁর ‘দি রিবার্থ অব হিস্টোরি : টাইমস অব রায়টস অ্যান্ড আপরাইজিংস’ গ্রন্থে ইতিহাসের পুনর্জন্ম কী করে কোন প্রক্রিয়ায় আরম্ভ হয় তার বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নতুন পর্যায় সূচিত হয় না। তাই আমরা যাকে মৌলিক সামাজিক পরিবর্তন বলি তার চাবিকাঠিও জনগণের উত্থান ও আন্দোলনের মাঝে। আমাদের সাপেক্ষে এই বিশ্লেষণ প্রাসঙ্গিক। কারণ আমাদের রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসের সাথে আছে আন্দোলনের অমোচনীয় ভূমিকা। মানবিক সমাজ বিনির্মাণে মানুষের জাগরণে আস্থাশীল পাঠকের এই বই কাজে লাগবে।