প্রাসঙ্গিক দুটি কথা ড. অমল রায় আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অকৃত্রিম বন্ধু। মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাটি অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী অত্যন্ত মেধাবী ও ধীশক্তির অধিকারী এই অমিত সম্ভাবনাময় বিজ্ঞানী একজন সুলেখকও বটে। তার লেখার প্রতিভা সম্পর্কে সেই ছাত্রজীবন থেকে আমি সুবিদিত। তার সাড়া জাগানো অনেক মৌলিক লেখা আমার দৃষ্টিতে আসার পর আমি তার লেখাগুলোকে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার জন্য উৎসাহ দেই। সে আমার কথা রেখেছে বলে তার প্রতি আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ-কষ্ট ও চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বেড়ে ওঠা এই মেধাবী শিক্ষার্থী দেশ ছেড়ে দুই দশকেরও বেশ আগে সপরিবারে সুদূর কানাডায় পাড়ি জমায়। তাই বলে দেশের জন্য ও মাতৃভাষার প্রতি তার দরদ একটুও কমেনি। শিক্ষানুরাগী মহৎপ্রাণ এই লেখক ও কৃতি বিজ্ঞানী যোজন যোজন দূরে থেকেও বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার মাইজদী কোর্ট এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসহায়তায় ‘অম্বর রায় শিক্ষা প্রকল্প’ নামে একটি মানবিক সংগঠন গড়ে তুলেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আধুনিক শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ ও শিক্ষার ব্যয় বহন করে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা জুগিয়ে যাচ্ছে। ‘উল্টো রথে উৎসে ফেরা’ বইটির বিক্রয়লব্ধ অর্থ সে তার পরিচালিত প্রকল্পভুক্ত শিক্ষার্থীদের জীবনমানোন্নয়নে ব্যয় করবে বলে ঘোষণা করেছে। তার স্বদেশপ্রেম সত্যিই ঈর্ষণীয়। তার দরদী প্রাণে দেশের মানুষের সুখ-দুঃখের কথা ও তার লেখায় এখনও গ্রাম বাংলার ছবি জ্বলজ্বল করে। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় তার দক্ষতা প্রশংসার দাবিদার। স্বভাবে কিছুটা অন্তর্মুখী হলেও তার অপরিসীম জ্ঞানতৃষ্ণা ও ক্ষুরধার লেখনীর কথা পরিচিতজন সকলেই জানে। কানাডায় অভিবাসী হওয়ার আগে আমরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতাম। পরবর্তীতে আমি সরকারি চাকরিতে যোগদান করি। উল্লেখ্য যে, ড. অমল রায় ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান (ক্রপ বোটানি) বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করার পরে কানাডার গুয়েলফ ইউনিভার্সিটি থেকে সে পুনরায় ক্রপ সাইন্স (এগ্রোনমি)-এ এমএস ও পরিবেশ বিজ্ঞানের উপরে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে। বর্তমান বিশ্বে সে একজন সফল পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচিত যার স্বীকৃতি ইতোমধ্যে কানাডা সরকার তাকে প্রদান করেছে। গ্রন্থাকারে এটি তার প্রথম প্রকাশিত বই হলেও দেশ-বিদেশের বহু বৈজ্ঞানিক জার্নাল ও সাময়িকীতে গবেষণাধর্মী তার অনেক লেখা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে যাতে তার বিজ্ঞান মনস্ক অসামান্য প্রতিভার পরিচয় মেলে। এই বইয়ে তার কিশোর জীবনের কিছু স্মৃতিচারণ এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যা পাঠককুলকে সহজে মোহাবিষ্ট করে তুলবে। অত্যন্ত ভ্রমণপিপাসু এই লেখকের কয়েকটি ভ্রমণকাহিনি এই বইয়ে স্থান পেয়েছে যা পা-ুলিপির প্রুফ দেখার সময়ে আমাকে যথেষ্ট মুগ্ধ করেছে। ধর্ম, বিজ্ঞান ও জীবন নিয়ে লেখকের প্রখর অনুভূতির সাবলীল উচ্চারণ পাঠকের মন জয় করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এই বইয়ের প্রতিটা লেখায় পাঠক ভিন্ন স্বাদের গন্ধ খুঁজে পাবে। আমি বইটির পাঠকপ্রিয়তা সম্পর্কে খুবই আশাবাদী। অত্যন্ত সংস্কৃতিপ্রেমী এই লেখকের দীর্ঘ জীবন কামনা করে তার পরবর্তী বইগুলোর অপেক্ষায় রইলাম। জি এম রুহুল আমিন কবি ও কথাসাহিত্যিক