সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে আইনস্টাইনের খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা সুবিদিত। ১৯০০ থেকে ১৯১৯ সাল ছিল পদার্থবিদ্যা গবেষণায় তাঁর সবচেয়ে সৃষ্টিশীল সময়। তাঁর প্রকাশিত গবেষণাপত্রসমূহে, অসংখ্য প্রবন্ধ ও গবেষণাগ্রন্থে, এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকে তাঁর যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক অবদানসমূহ বিধৃত রয়েছে। নিঃসঙ্গ অনন্য বিজ্ঞান প্রতিভা হিসেবে তাঁর এই প্রবল উপস্থিতির পাশাপাশি এক প্রবীণ, প্রাজ্ঞ শান্তিবাদী ও মানবতাবাদী হিসেবেও আইনস্টাইন সুপরিচিত। জীবনের শেষ চার দশক ধরে তিনি বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি যুদ্ধ প্রতিরোধ, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবকল্যাণের কাজে নিরন্তর সক্রিয় ছিলেন। বিজ্ঞান গবেষণা এবং শান্তি অন্বেষায় আইনস্টাইনের অবদান সম্বন্ধে বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, 'আইনস্টাইন তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে সেরা বিজ্ঞানীই শুধু ছিলেন না, তিনি একজন জ্ঞানী মানুষও ছিলেন, যা ভিন্ন কিছু। রাষ্ট্রনায়করা যদি তাঁর কথা শুনতেন, তবে মানব ইতিহাসের গতিপথ যা হয়েছে তার চেয়ে কম বিপর্যয়কর হতো।' আইনস্টাইনের রাজনৈতিক মতাদর্শ, শান্তির অন্বেষা, যুদ্ধবিরোধিতা, মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা আদায়ের সংগ্রাম, বিশ্ব সরকার গড়ার প্রচেষ্টা প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা এই বইয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য। আইনস্টাইনের রাজনৈতিক এবং শান্তিবাদী ধ্যানধারণা এবং কার্যক্রমের সঙ্গে ১৯৭৯ সালে আমার প্রথম সম্যক পরিচয় ঘটে। পৃথিবীজুড়ে তখন আইনস্টাইন জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আয়োজন চলছে। বাংলা একাডেমি বিজ্ঞান পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক এবং বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক শ্রীতপন চক্রবর্তী আইনস্টাইনের ওপর পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার জন্য লেখার অনুরোধ জানালে আমি 'শান্তির সৈনিক আইনস্টাইন' শীর্ষক নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখি। প্রবন্ধটি পরে তপন চক্রবর্তী ও শাহজাহান তপন সম্পাদিত 'আইনস্টাইন' গ্রন্থে সংকলিত হয়। বিগত তিন দশকে আইনস্টাইনের জীবন ও কাজ সংক্রান্ত গবেষণার প্রসার এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে। বিজ্ঞান গবেষণার বাইরে তাঁর লেখা, বক্তব্য, বিবৃতি, চিঠিপত্র, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি সংগৃহীত ও সংরক্ষিত এবং গবেষকদের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়েছে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস তাঁর সংগৃহীত কাগজপত্রের সংকলন (The Collected Papers of Albert Einstein) খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশ করছে। গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রে বোস্টন ইউনিভার্সিটি এবং জেরুজালেমে হিক ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আইনস্টাইন আর্কাইভ ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছেন। আইনস্টাইনের জীবন ও কাজ সম্বন্ধে সবসময়ই গবেষক এবং পাঠকদের প্রবল আগ্রহ ছিল। ফলে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ, যুদ্ধ, শান্তি ও মানবাধিকার সংক্রান্ত ধ্যানধারণা এবং ব্যক্তিজীবন গবেষক ও জীবনীকার গভীর অভিনিবেশ সহকারে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। এসব প্রকাশনা এবং গবেষণা আইনস্টাইনকে ঘিরে রহস্যময়তার আবরণ যেমন উন্মোচন করে, তেমনি তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশকে সেই অশান্ত ও দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ের যথাযথ প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে। সম্প্রতি শ্রীতপন চক্রবর্তী আবার আমাকে অনুরোধ করেন শান্তির সপক্ষে আইনস্টাইনের কার্যক্রমের ওপর আমার আগে লেখা সেই প্রবন্ধ সম্প্রসারণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ বই প্রকাশ করার জন্যে। তাঁর উৎসাহ ও তাগিদ ছাড়া এ বই লেখা হতো না। তিনি মনোযোগ দিয়ে পাণ্ডুলিপি পড়েছেন এবং তাঁর সম্পাদকীয় মন্তব্য এর মান উন্নত করেছে। তাঁর কাছে আমি সবিশেষ কৃতজ্ঞ। আমার ভাই-বোনেরা- তুষার, তাপস, অদিতি ও কৃষ্ণা পাণ্ডুলিপি পড়ে মন্তব্য করেছে, বানান ও বিন্যাসের ভুল-ত্রুটি নির্দেশ করে দিয়েছে এবং প্রুফ সংশোধন করেছে। ওদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বইয়ের প্রথম কয়েকটি অধ্যায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার জন্য bdnews24bangla.com অনলাইন পত্রিকার আর্টস বিভাগীয় সম্পাদক রাজু আলাউদ্দিনকে ধন্যবাদ। পুস্তকাকারে প্রকাশ করার জন্য অনুপম প্রকাশনীর শ্রীমিলন নাথকে কৃতজ্ঞতা জানাই। বইটি পাঠকদের কাছে সমাদৃত হলে আমার প্রচেষ্টা সার্থক মনে করব