'মালায়ুর দেশে' গ্রন্থটি প্রকাশের মাত্র মাসখানেক আগে লেখক শেষবার মালয়েশিয়া ঘুরে এলেন। সে-হিসেবে মালয়েশিয়ার সাথে লেখকের চেনাজানার সম্পর্ক প্রায় দুই দশক অতিক্রান্ত হলো। দীর্ঘ প্রবাসজীবনে লেখক কুয়ালালামপুর শহরে পায়ে-পায়ে হেঁটেছেন দেশিবিদেশি অগণন মানুষকে পাশে নিয়ে। কুয়ালালামপুরের পথঘাট, শপিংমল, বাসে-ট্রেনে ঘুরেছেন আর দশজন পথিকের মতোই। মালয়েশিয়ার জাতীয় ও স্থানীয় নানা অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন আকুল আগ্রহী হৃদয়ে। তবে তাঁর ভেতরে ছিল লেখক-মন। সংঘবদ্ধ-দলগত ও বন্ধুর সাথে পথচলার মধ্যেও থেকেছেন একা, জানা-বোঝায় নিমগ্ন-মনে। মালয়েশিয়াকে আর মালয়েশিয়ার মানুষকে জেনেছেন গভীর মনোযোগ সহকারে। পরিলক্ষিত করেছেন তাদের দৈনন্দিন যাপিত-জীবনের খুঁটিনাটি। প্রবাসে থাকাকালীন মধ্যরাতে 'প্রবাসের ব্যালকনিতে' দাঁড়িয়ে তিনি মালয়েশিয়া ও স্বদেশের তুলনামূলক বিভিন্ন চিত্র নিয়ে ভেবেছেন দীর্ঘ বছর। চোখের দেখায় মালয়েশিয়ার সমস্ত ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে যতোটা মুগ্ধ হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি কল্পনা করেছেন একদিন বাংলাদেশও এমন সুশৃঙ্খল ও উন্নত দেশ হিশেবে গড়ে উঠবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও জাপানের ইতিবাচক দিকগুলো চিত্রায়িত করেছেন তাঁর 'জাপান যাত্রী' গ্রন্থে; বঙ্গবন্ধু তাঁর দেখা নয়া চীনের সমস্ত প্রশংসনীয় বিষয় লিপিবদ্ধ করেছেন 'আমার দেখা নয়াচীন'-এ। লেখক রফিক আহমদ খানও মালয়েশিয়াকে যেভাবে দেখেছেন, জেনেছেন, অনুভব করেছেন- এর নির্যাসটুকু তুলে ধরেছেন 'মালায়ুর দেশে' গ্রন্থে। এই বই পাঠকের সামনে তুনকু আবদুল রহমানের দেশ মালয়েশিয়া নতুন তথ্য-বিশদে উম্নোচিত হবে। আমরা আশা করি, বাংলা ভ্রমণসাহিত্যে একটি মহার্ঘ গ্রন্থ সংযোজিত হতে যাচ্ছে 'মালায়ুর দেশে'।
রফিক আহমদ খান, পিতা ছৈয়দ নূর খান ও মাতা জয়নাব বিবি। জন্ম ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০ সালে, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ের পাদদেশ বৈরাগ গ্রামের খানবাড়িতে। ১৯৯৭ সালে শাহ মোহছেন আউলিয়া (রা.) কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময়ে দৈনিক আজাদী পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে লেখার মধ্য দিয়ে সংবাদপত্র-জগতে লেখালেখির হাতেখড়ি। এরপর থেকেই শিশুতোষ ইড়া লেখার পাশাপাশি স্থানীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতা-জীবনের শুরু। আনোয়ারা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ য করে জীবিকার অন্বেষণে ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই পাড়ি জমান পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায়। প্রবাসে থাকাকালীন লেখালেখিতে ছেদ পড়ে তাঁর। সৌভাগ্য যে, দূর পরবাসে বসে তখনকার দিনে বাংলাদেশের অন্তত শুক্রবারের পত্রিকাটি মালয়েশিয়ায় পাওয়া যেত। সেই সুবাদে পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী পাঠের মধ্য দিয়ে সাহিত্যপাঠে ছেদ পড়েনি তাঁর। সেই একটি পত্রিকা সপ্তাহজুড়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে নিজেকে ঋদ্ধ করার কিছুটা সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালের শেষ দিক থেকে বাকি বিশ্বের সাথে সাথে বাংলাদেশও পুরোপুরি অনলাইন যুগে প্রবেশ করলে, ভিন দেশে বসে দেশের সাহিত্য পাঠের সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি লেখালেখিতেও পুনঃপদার্পণ ঘটে লেখকের। মালয়েশিয়া থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেন প্রবাসজীবনের নানান বিষয় নিয়ে। সাংবাদিকতা করেছেন 'বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম'-এর মালয়েশিয়া প্রতিনিধি হিসেবে। মালয়েশিয়া ছাড়াও ভ্রমণ করেছেন বেশ কয়েকটি দেশ। তাঁর প্রথম বই প্রবাসজীবন ও প্রবাসীদের নিয়ে লেখা 'প্রবাসের ব্যালকনিতে' প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের অমর একুশে বইমেলায়। বইমেলা ২০২১-এ প্রকাশিত হয় তাঁর ২য় বই ছড়াগ্রন্থড় 'আলোর মেলা শিশুর খেলা'। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ভ্রমণকাহিনি ও মননশীল প্রবন্ধ লেখায় মনোনিবেশ করেছেন।