পৃথিবীতে ভাষার জন ̈ যারা জীবন দিয়েছে, তার মধে ̈ বাংলাদেশিরা অন ̈তম। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষা করতে রাজপথে জীবন দিয়েছেন আমাদের সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না-জানা অসংখ ̈ বাংলা মায়ের সন্তান। কিš‘ জীবনের বিনিময়ে যে ভাষা আমরা পেয়েছি, তার কি সঠিক ব ̈বহার আজও আমরা করতে পারছি? পাঠ ̈বই থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান এমনকি ভাষাচর্চার উর্বরক্ষেত্র প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ̧লোতেও কি আমরা সঠিক বাংলা শব্দ ও বাক ̈ লিখতে সক্ষম হ”িছ? ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সর্বত্রই চোখে পড়ে ভুলবানান আর ভুলবাকে ̈র ছড়াছড়ি। দেশের সেরা ভাষাবিদেরা বাংলা ভাষা চর্চা ও বাংলা ব ̈াকরণ নিয়ে বহু গ্রš’ প্রকাশ করলেও এখনো বানানগত জটিলতা রয়েই গেছে। বাংলা একাডেমি থেকে বিশাল সাইজের ‘ব ̈বহারিক বাংলা অভিধান’ বের হলেও এর কতটাই- বা আমরা রপ্ত করতে পেরেছি? তাইতো দেখা যায়, কোমলমতি শিশু থেকে শুরু করে ্̄নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত বাংলা বানান লিখতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। এর কারণ পাঠ ̈বই ̧লোতে বানানের হতশ্রী অব ̄’া। প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ ̈মে শত শত বই বেরো”েছ। এসব বইয়ের বেশির ভাগই ভুল তথ ̈ আর ভুল বানানে লেখা। হাতে গোনা কয়েকটি প্রকাশনা ছাড়া অধিকাংশ প্রকাশনার বই-ই ভুলে ভরপুর। অনেক বইয়ে তথে ̈র ঘাটতি না থাকলেও বানান-রীতিতে রয়েছে ব ̈াপক ঘাটতি। বানান এবং তথে ̈র দিক দিয়ে সবচেয়ে সচেতন প্রিন্ট মিডিয়া ̧লোতেও প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে মোটা দাগের ভুল। আর অনলাইন মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ̧লোতে তো বানানের ব ̈াপারে কোনো যত্ন নেওয়া হয় বলে মনেই হয় না। যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই তা পরিবেশন করে চলেছেন। আর সামাজিক বাংলা বানান ও প্রুফ সংশোধনের কলাকৌশল ষ ৭ যোগাযোগমাধ ̈ম ̧লোতে চোখ পড়লে তো মাথায় হাত! এমন সব উদ্ভট বাক ̈ ও শব্দ দেখা যায়, যা বাংলা ভাষাকে রীতিমতো অপমানের শামিল। কিš‘ এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব ̈থাও নেই। অথচ একটু সচেতন হলেই সম্ভব শুদ্ধভাবে বাংলা লেখা। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সংবাদপত্র ও বিভিন্ন প্রকাশনীতে কাজ করার সুবাদে বাংলা বানান ও শব্দ নিয়ে নানা অসংগতি আমার নজরে এসেছে। বাড়ির দেয়াল, গাড়ির নামফলক, রা ̄Íাঘাটের সাইনবোর্ড, দোকানপাটের নামকরণ, সরকারি-বেসরকারি অফিসের নামফলক বা সাইনবোর্ড, উ”চপদ ̄’ কর্মকর্তাদের পদবির প্লেট, আদালতের দলিল-দ ̄Íাবেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, রাজনৈতিক দল ̧লোর ব ̈ানার-পোস্টারÑযেখানেই চোখ পড়ে, কেবল ভুল আর ভুল! কিছু ভুল এমন যে, তার অর্থের বিক...তি ঘটে পুরো বিষয়টি হাস ̈কর হয়ে দাঁড়ায়। যারা বাংলা বানান বিষয়ে সচেতন, এই ভুল শব্দ ̧লো দেখামাত্র তাদের মনের মধে ̈ একধরনের অ ̄^ি ̄Í চলে আসে। মনে হয়, এই ভুলবানান ̧লো যেন তাদের দিকে চেয়ে বিদ্রƒপ করছে! ই”ছা হয়, এখনই গিয়ে নিজ উদে ̈াগে এসব সংশোধন করে দিই। কিš‘ এটা কি সম্ভব? তাই একটুসচেতন হলেই আমরা এড়াতে পারি এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ভুল, যা আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলা ভাষাকে করে তুলবে পাঠের পুরো উপযোগী, মানসম্মত এবং আরও আকর্ষণীয়, মোহনীয় ও সুখপাঠ ̈। বাংলা ভাষার নিয়ম-কানুন নিয়ে দেশসেরা ভাষাবিদেরা বহু বই রচনা করেছেন। তাই ভাষা নিয়ে লেখা আমার উদ্দেশ ̈ নয়। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও প্রকাশনা সং ̄’ায় সম্পাদনা সহকারী (প্রুফ রিডার) হিসেবে কাজ করার সুবাদে আমি এমন কিছু বিষয় উদ্্ঘাটন করেছি, যা যেকোনো কিছু লেখার ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার জন ̈ দায়ী। বাংলা ভাষার লাখ লাখ শব্দের বানান মুখ ̄’ বা আয়ত্ত করা একজন মানুষের পক্ষে কেবল কঠিনই নয়, দুঃসাধ ̈। এই কঠিন কাজটিকেই সহজে রপ্ত করার কিছুকৌশল আমি ‘বাংলা বানান ও প্রুফ সংশোধনের কলাকৌশল’ বইতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, যা আয়ত্ত করলে বাংলা ভাষাভাষী যে কারও পক্ষে অতি সহজেই নির্ভুল বাক ̈ বা শব্দ লেখা সম্ভব। এ জন ̈ পয়েন্ট আকারে কিছুসূত্র তুলে ধরা হয়েছে, যে ̧লো রপ্ত করলে একই ধরনের হাজারো শব্দকে একই সূত্রে আবদ্ধ করে নির্ভুলভাবে লেখা সম্ভব। পাশাপাশি হার্ড ও সফট বাংলা বানান ও প্রুফ সংশোধনের কলাকৌশল ষ ৮ কপিতে প্রুফ সংশোধনের কিছুকৌশল নিয়ে বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে, যা থেকে লেখক, প্রুফ রিডারসহ সকল শ্রেণির মানুষউপক...তহতে পারেন। সবচেয়ে জটিল ও কঠিন বইয়ের বানান ও প্রুফ সংশোধন করা। এ বিষয়ে বইটিতে বি ̄Íারিত আলোচনা রয়েছে। এ ছাড়া মাঝেমধে ̈ সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এমন কিছু ভুল ছাপার অক্ষরে পাঠকের কাছে পৌঁছে যায়, যা নিয়ে রীতিমতো হুলু ̄’ুল পড়ে যায়। বইটির শেষ দিকে এ রকম কয়েকটি ভুলের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, যা পড়ে পাঠক ভুলটির ব ̈াপকতা জানার পাশাপাশি বিনোদনের খোরাকও পাবেন। বেশ কয়েক বছর যাবৎই এ ধরনের একটি বই লেখার ই”ছা মনের মধে ̈ পোষণ করে এলেও সাহস করতে পারছিলাম না। জয়তীর কর্ণধার মাজেদুল হাসান পায়েল এ বিষয়ে একটি বই লেখার অনুরোধ জানিয়ে ছাপানোর প্রতিশ্রুতি দিলে অনুপ্রাণিত হই এবং বইটি লেখার কাজে হাত দিই। এ জন ̈ পায়েল ভাইয়ের প্রতি জানা”িছ ক...তজ্ঞতা। পাশাপাশি বইটি লিখতে গিয়ে পরিবারের সদস ̈, সহকর্মী, বন্ধুবান্ধবসহ যাদের সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি, তাদের প্রতি রইল আমার শুভে”ছা। বইটি ̄‹ুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব ̈বসায়ী, রাজনীতিবিদ, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বাংলা ভাষাভাষী সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপকারে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। বইটি পড়ে পাঠক যদি এ থেকে নূ ̈নতম উপক...তহন, তাহলেই নিজেকে সার্থক মনে করব। মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম সহরংষধস২৩@মসধরষ.পড়স
মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ৩১ মে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম ভাদৈ গ্রামে মধ্যবিত্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ মকবুল হুসেন এবং মা ফাতেমা বেগম। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে নিজ গ্রামের আলো-বাতাসে। ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া পড়াশোনা করেছেন পশ্চিম ভাদৈ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে। । দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত চাকরিজীবনে প্রথম আলো, যায়যায়দিন, ঢাকা টাইমস, জাগরণসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিকী ও প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করেছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ও বহির্বিশ্বে সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা সংবাদপত্র 'ঠিকানা'র অনলাইন-প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি একজন কলাম লেখকও। 'বাংলা বানান ও প্রুফ সংশোধনের কলাকৌশল' লেখকের প্রথম বই। লেখালেখি ছাড়াও ভ্রমণ করা এবং ক্রিকেট খেলা দেখতে পছন্দ করেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বর্তমানে সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করছেন।