“উজানীনগরের কন্যাকে নিয়ে মিথের যে নগর ভ্রমণ করেছিলেন আশির দশকের কবি রিজোয়ান মাহমুদ, সময়ের গতিপথ অনুসরণ করে তিনি আজ মানুষের মুমূর্ষু ইকোলজিকে সমবেদনার জলে ভিজিয়ে দিচ্ছেন। সিন্ধু সভ্যতা দূর অতীত ঐতিহ্য হলেও কীভাবে অনুভূতির বুননে কবিতায় তা স্থানিক মানুষদের সংস্কৃতি হতে পারে, শক্তিমান রিজোয়ান মাহমুদের বর্তমান কাব্যই তার স্বাক্ষর। এই বইয়ের অন্তর্ভুক্ত ‘জেলেপাড়ার আনন্দতাঁবু’ কবিতায় জাদুবাস্তবতায় তুলে এনেছেন ভিন্ন অনুধাবনে। চর্চিত চিত্রকল্পের বাইরে এসে বাংলা কবিতার অনিবার্য প্রাসঙ্গিকতায় তিনি নিজের কবিতাকে নতুনভাবে বয়ান করলেন এভাবে : ‘সুখের ভেতর যে দিদিয়া ছিল, একদিন/ যাকে বেঁধেছি সেফটিপিনে/ সুরা ইখলাসের অর্থ ভুলে সে স্পাইরাল মেঘের/ ভেতর হারিয়ে গেল।’ সমসময়কে শুধু আত্মস্থ নয়, অতিক্রমও করতে হয় কবিদের সচেতনভাবে। ঔপনিবেশিক-উত্তর একটি কালকে নির্ণয় করে কবি কেবল ব্যক্তিপ্রেমের কবিতা লেখেন না, কবিতার বাঁকবদলের বয়ান, তত্ত্ব ও ইতিহাস নিয়ে থাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ। তবু একজন কবি শেষাবধি তাত্ত্বিক নন, আমৃত্যু কবি। কবি রিজোয়ান মাহমুদ এসব দার্শনিক ভাবনাকে অভিযোজন করেছেন বিচ্ছিন্নতাবোধের বিপরীতে দাঁড়িয়ে। কবি এখানে চমৎকার সাযুজ্য খুঁজে পান রবীন্দ্রনাথের আফ্রিকার অতল অন্ধকারে আত্মমগ্ন পরিপার্শ্বকে। এই হাত হাজারদুয়ারি-র স্পর্শে প্রত্যক্ষদর্শীর পর্যবেক্ষণে দ্রাক্ষাফলের মতো সতেজ হয়ে ওঠে অচল শব্দ। অপ্রচল ভাষায় রহস্যের উন্মোচন এবং আত্মমুখীনতায় আবিষ্কার করেন সম্পর্কের রাষ্ট্রলিপি : ‘এই হাত হাজারদুয়ারি/ ভাগীরথী নিঃস্ব তীরে/ বুকের হাড়ের মিড় ছুঁয়ে দেখো/ সব ক্ষত সেরে যাবে ধীরে ধীরে।’ বাংলা কবিতার পর্বান্তরে উত্তর আধুনিক কবিতায় সামাজিক রূপান্তরের মাধ্যমে কাব্যক্ষুধার নবজাগরণ ঘটে। আলোচ্য কাব্যে ইতিপূর্বে সৃজিত কাব্যের বিস্তার হয়েছে আজকের চিন্তা ও শব্দের সংশ্লেষণে। সাজিদুল হক