বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোঃ আবদুল হামিদের এক অনবদ্য স্মৃতিকথা আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি। ১৯৪৪ থেকে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর পথচলার বৃত্তান্ত এই স্মৃতি আলেখ্য। জন্মপূর্ব ইতিহাস ও বংশপরিচয় থেকে শুরু করে দূরন্ত ছেলেবেলা, শিক্ষাজীবনের বিচিত্র ঘটনাবলি, রাজনীতিতে সম্পৃক্তি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সান্নিধ্যলাভ, ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে যুক্ততার অনুপুঙ্খ বিবরণ গ্রন্থটির উপজীব্য বিষয়। একইসঙ্গে রয়েছে তাঁর পরিবার ও সংসার জীবনের সুখ-দুঃখের যুগলবন্দি এবং হাওড়-জনসংস্কৃতির অন্তরঙ্গ চিত্র। বিশশতকের ষাটের দশকের শেষ দিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তি, মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা গ্রহণ, শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার অভিজ্ঞতার মর্মভেদী বয়ান গ্রন্থটিকে ঐতিহাসিক মর্যাদায় উন্নীত করেছে। হাওড়-বাংলার এক তরুণ পরম নিষ্ঠা ও যোগ্যতায় কী করে রাজনীতির মূলস্রোতের সঙ্গে মিশে হয়ে উঠেছিলেন জনমানুষের নয়নের মণি-গ্রন্থটি তারই শিল্পিত ভাষ্য। বৈঠকি ভঙ্গি, মুখের কথার কাছাকাছি ভাষার ব্যবহার, ঘটনা ও চরিত্রের রসঘন বর্ণনা-সর্বোপরি গ্রন্থকারের সংবেদনশীল মন, জীবনঘনিষ্ঠ ও উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রন্থটিকে করেছে চিত্তাকর্ষক। ফলে সব শ্রেণির পাঠকের জন্যই এই গ্রন্থ আকর্ষণীয় হবে-এ আমাদের সুগভীর প্রত্যাশা।
আব্দুল হামিদ (জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৪৪) বাংলাদেশী প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। এর আগে তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় তিনি ২০১৩ সালে স্বাধীনতা দিবস পদকে ভূষিত হন। তিনি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোঃ তায়েব উদ্দিন এবং মাতার নাম তমিজা খাতুন। তিনি নিকলী জিঃ সিঃ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন এবং কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএ পাশ করেন।গুরুদয়াল কলেজের ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঢাকা সেন্ট্রাল ল' কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রিও লাভ করেন। কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টে ওকালতি করেছেন। কিশোরগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন বেশ কয়েকবার। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৬১ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। এবং বেশ কয়েকবার পাকিস্তান সরকার তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদেরও সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।১৭ মার্চ ১৯৭১ সালে কিশোরগঞ্জের রথখোলা মাঠে ছাত্র জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালে প্রথম এবং এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে কিশোরগঞ্জ থেকে ধারাবাহিকভাবে পরপর ছয়বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।