ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদের গল্প সংকলন ‘কিচ্ছা’। মোট আঠারোটি গল্পের সুনিপুণ বয়ান আছে গল্পগ্রন্থটিতে। প্রতিটি গল্পের বিষয়বস্তু যেমন অভিনব, তেমনি বর্ণনার ভঙ্গি চমকপ্রদ। প্রেম, স্নেহ ও ভালোবাসার গল্প যেমন আছে; তেমনি আছে অবিশ্বাস, প্রতারণা ও বর্বরতার গল্পও। মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী গল্পের সাথে আছে অর্জিত বিজয়ের যথাযথ সুফল না পাওয়ার জন্য উপহাসও। ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার দায়ে সা¤প্রদায়িক হামলার মর্মস্পর্শী কাহিনি আছে বানপ্রস্থ গল্পে। মশকের মশকরা গল্পে রূপকের আশ্রয়ে নির্বোধ এক জাতির গল্প বিবৃত হয়েছে। পতঙ্গ গল্পে দরিদ্রতার দায়ে এক অসহায় মায়ের গণিকাবৃত্তি বরণ করে নেয়া এবং অবুঝ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু যেকোনো সহানুভূতিশীল হৃদয় আর্দ্র করবে। রাতের আঁধারে উপভোগ্য যে পতিতার কাছে তথাকথিত সামাজিক মানুষ লালসা মেটাতে যায়, দিনের আলোতে তাদের অস্পৃশ্য হওয়ার কাহিনি নিশিকন্যা। আমরা কার প্রেমে পড়ব, তা-কি আমরা নির্ধারণ করতে পারি! পারগেটরি গল্পে সম্মোহনী বর্ণনায় বিভা-শান-রুহির ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি পাঠকের অবশ্যই ভালো লাগবে। ‘কিচ্ছা’-র গল্পকাররা প্রায় সবাই নবীন লেখক; তথাপি তাদের গল্প বলার কৌশল মোহিত করবে পাঠককে। এই তরুণদের লেখায় প্রতিশ্রুতির ছাপ আছে; আছে বাংলা সাহিত্যকে নবতর ছন্দে স্পন্দিত করার মেধা ও যোগ্যতা। আশাকরি বইটি পড়ে, বর্তমান সময়ের নবীনদের চিন্তা-চেতনার সাথে পাঠক-সমাজ পরিচিত হবেন, লেখক-পাঠক মিলিত সমবায়ে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গন হবে উজ্জ্বলতর।
ফয়সাল আহমেদ জন্ম ১৯৬৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ভৈরব থানাধীন ভৈরবপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। মধ্যবিত্ত সাঙ্গীতিক পরিবেশে পারিবারিক বেষ্টনীতে তিনি বড় হয়ে উঠেন। তার বাবা আব্দুল জব্বার একজন হোমিও ডাক্তার। তিনি অত্র এলাকাতে অত্যন্ত জনপ্রিয় সফল চিকিৎসক। চিকিৎসক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতির পাশাপাশি একজন সৌখিন সেতার বাদক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল। উস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সাহেবের কাছে উনার সঙ্গীতে হাতেখড়ি। সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী জনাব ফয়সাল আহমেদের সঙ্গীতে প্রথম হাতেখড়ি বাবার কাছেই। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি ছিল তার দুর্বার নেশা। পরবর্তীতে উস্তাদ ইসরাইল খান সঙ্গীত নিকেতন থেকে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। উস্তাদ আবদুল মতিন, উস্তাদ মনজুর হোসেন ও উস্তাদ তোফাজ্জল হোসেনের কাছে নজরুল সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীতসহ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নেন। ১৯৮৯ সালে ঢাকায় এসে ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনে নজরুল সঙ্গীতের উপর তালিম নেন শ্রদ্ধেয়া অঞ্জলি দিদি, আহসান মোর্শেদ, সঞ্জীব দে, সোহরাব হোসেন প্রমুখ বিদগ্ধ সঙ্গীতবিশারদের কাছে। পরবর্তীতে শুদ্ধ নজরুল সঙ্গীতের উপর প্রায় এক যুগ ধরে তালিম নেন উস্তাদ সুধীন দাস ও সোহরাব হোসেনের কাছে 'নজরুল ইনস্টিটিউট'-এ। বর্তমানে তিনি বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টস (বাফা)-তে নজরুল সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ বেতারেও নজরুল সঙ্গীত এবং আধুনিক গানের নিয়মিত শিল্পী। একজন সুরকার, গীতিকার হিসেবেও তার একটা পরিচয় পাওয়া যায়। জনাব ফয়সাল আহমেদের লেখা আধুনিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন উস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, শেখ জসিম, সুজিত মোস্তফা, ক্লোজআপ ওয়ান-এর সালমা, সানি জুবায়ের, ফাতেমাতুজ জোহরা, তপু ও তাহসানসহ এ প্রজন্মের অনেক জনপ্রিয় শিল্পী। 'সুরেরধারা' লেখকের সঙ্গীতবিষয়ক প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। -বিশ্বজিৎ বণিক শিক্ষক, শিশু সংগঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মী ভৈরববাজার, কিশোরগঞ্জ।