বঙ্গবন্ধু : মানবমুক্তির কাণ্ডারি 'মানুষসম' মাতৃভাষায় মানুষের অধিকার যেমন সহজাত তেমনি আমাদের "স্ব মাতৃভূমিতে স্বাচ্ছন্দে বসবাসের অধিকার-অবদমিত ও অপহৃত হয়েছিলো নানা কারণে। ইতিহাস যার সাক্ষ্য বহন করছে। বাংলা ভাষার মুক্তির সহযাত্রীদের অন্যতম হয়ে এবং স্বদেশমুক্তির পুরোধাজনক রূপে যার অবদান অবিসংবাদিত তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর এই অতুল অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে পণ্ডিতবর ড. এনামুল হক প্রথম দ্বিধাহীন ভাষায় উচ্চারণ করেছিলেন- বঙ্গবন্ধু বাঙালি শ্রেষ্ঠ। এই প্রত্যয়টি তখনকার দৈনিক বাংলা পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় বড়ো বড়ো অক্ষরে মুদ্রিত হয়েছিলো। আমরা ভাগ্যবান, এই ক্ষণজন্মা মানুষটির জন্মশতবর্ষের শুভক্ষণ উদযাপনের সুযোগ পেলাম। ঢাকা শহর থেকে ১৫২ কিলোমিটার দূরে নদীপথ ছাড়া প্রায় যোগাযোগ- বিহীন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আর পাঁচটি বাঙালি সন্তানের মতো জন্মেছিলেন খোকা নামের শিশুটি। গ্রামীণ জনপদের সকল শ্রেণির মানুষের সংস্পর্শে এসে মানবিক মূল্যবোধ এবং মানবচরিত অধ্যয়ন করেছিলেন সেই শিশু-কিশোর-তরুণ বঙ্গবন্ধু। সেখান থেকেই তিনি পর্যায়ক্রমে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হয়ে উঠলেন। মুক্ত মানবসমাজ গড়ার স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন যোজনা দূর কল্পনাপ্রসূত বলে মনে হলেও, কেবল বাঙালি নয়, বিশ্ববাসীকেও দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, আপন অফুরান-দৃঢ়তা দিয়ে। আমরা তাঁর গর্বিত উত্তরাধিকার। স্কুলে পড়ার সময় অধিকার সচেতন শেখ মুজিব দাবি আদায়ে অনড় থেকেছেন। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান মওলানা আজাদ কলেজ) পড়ার সময় সক্রিয় ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। এই অংশ নেয়া লেজুড়বৃত্তি ছিলো না, ছিলো স্বকীয় ব্যক্তিত্বে সমুজ্জ্বল। তাঁর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মতপার্থক্য হয়েছে, তবে আত্মসমর্পণ করেন নি। শেখ মুজিবের বক্তব্যের যৌক্তিকতা অনুধাবন করে সোহরাওয়ার্দী তাঁকে সয়েহে কাছে টেনে নিয়েছেন। অপ্রকাশিত আত্মজীবনীতে তার চমৎকার বর্ণনা আছে। কলকাতায় কলেজ হোস্টেলে অবস্থানের কালে দেশজুড়ে দুর্ভিক্ষ আর জাতি-বিদ্বেষ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করলে তিনি জীবন বাজি রেখে আর্তমানবতা রক্ষার জন্য অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। সৎ কর্মযোগী তরুণের কর্মযজ্ঞের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তখনকার ঐ কলেজের শিক্ষক এবং হোস্টেল সুপার প্রফেসর সাইদুর রহমান অকপটে তাঁর প্রশংসা করেন।