নানা কারণে একাত্তরের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। একদিকে ছিল একটি জনগোষ্ঠীর কোটি কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা। অন্যদিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর বহুমাত্রিক দ্বন্দ্ব ও সমীকরণ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এর গন্তব্যে পৌঁছেছে। একাত্তরের এই গতিধারা ও ইতিহাসের খুব অল্পই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। একাত্তরের যুদ্ধ শুধু ঢাকা আর ইসলামাবাদের মধ্যে আটকে ছিল না। বাংলাদেশকে নিয়ে বিবদমান পরাশক্তিগুলোর মধ্যে হয়েছিল ছায়াযুদ্ধ। অনেক দৌড়ঝাঁপ হয়েছে কলকাতা, দিল্লি, ওয়াশিংটন, মস্কো আর বেইজিংয়ে। কূটনৈতিক লড়াই হয়েছে জাতিসংঘে। এর একটি বড় অনুষঙ্গ ছিল প্রচারযুদ্ধ। সব ছাপিয়ে উঠে এসেছে ভারতের ভূমিকা। অনেক ঐতিহাসিক দলিলের সূত্র ধরে লেখা এ বই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বাকমুক্তির প্রক্রিয়ায় এক অনন্য সংযোজন, যা পাঠকের কৌতূহল বাড়িয়ে তুলবে। বাংলার মানুষের উদারতার সুযোগ নিয়ে সারা বাংলাদেশকে লুট করা হয়েছে। যাঁদের ৫ লাখ টাকা ছিল, তাঁরা এখন ৫ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। - শেখ মুজিবুর রহমান শেখ মুজিবুর রহমান কৌশলে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যার ফলে পাকিস্তানের দুই অংশ সাংবিধানিক ও আইনি পদ্ধতিতে আলাদা হয়ে যায়। - জুলফিকার আলী ভুট্টো ভুট্টো আর মুজিব উভয়েই অখণ্ড পাকিস্তানের বদলে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র চেয়েছেন।- ইয়াহিয়া খান পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশ থাকুক, এ ব্যাপারে আমরা কোনো চাপ দিইনি। বিরাজমান প্রক্রিয়াগুলো চালু রাখতে দিলে ১৯৭২ সালের বসন্তের মধ্যেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। - হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের লড়াই আজ ভারতের লড়াই। এটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধে নামা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। - ইন্দিরা গান্ধী
সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত মহিউদ্দিন আহমদের বই ‘এক-এগারো’ও তার পূর্বে প্রকাশিত বইগুলোর মতো পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, দিয়েছে জানা-অজানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল ও এর সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের সম্বন্ধে জানতে, বুঝতে এবং অনুসন্ধানী তথ্য পেতে তার বইয়ের তুলনা হয় না। মহিউদ্দিন আহমদ এর বই সমূহ হলো বিষয়ভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ, যেগুলোতে লেখক নিজের বিশ্লেষণী জ্ঞান কাজে লাগিয়ে কোনো একটি বিষয়ের গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করেছেন, তার সাথে জড়িতদের থেকে তথ্য নিয়েছেন, মিডিয়া গবেষণা করেছেন এবং বিস্তর তথ্যা ঘেটে সবচেয়ে প্রামাণ্য তথ্যটুকুই দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ‘বাঙালির জাপান আবিষ্কার’, ‘ইতিহাসের যাত্রী’, ‘রাজনীতির অমীমাংসিত গদ্য’, ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’, ‘বিএনপি: সময়-অসময়’, ‘আওয়ামীলীগের উত্থানপর্ব: ১৯৪৮-১৯৭০’, ‘আওয়ামীলীগ: যুদ্ধদিনের কথা’, ‘এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল’, ‘আলোকিত মানুষ’, ‘এ্যালান পো’র শ্রেষ্ঠ গল্প’, ‘বোমা বন্দুকের চোরাবাজার’, ‘Seoul Diary’, ‘Elegy and Dream’- এর মতো পাঠকপ্রিয় বই নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদ এর বই সমগ্র। মহিউদ্দিন আহমদ ১৯৫২ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শিক্ষাজীবনে জড়িত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সাথেও। ১৯৭০ সালের ডাকসু নির্বাচনে মুহসীন হল থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরের বছর মুক্তিযুদ্ধে তিনি ‘বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট’ এর হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে দক্ষিণ কোরিয়ার সুংকোংহে বিশ্ববিদ্যালয়ে এনজিও স্টাডিজ নামক একটি বিভাগের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। কর্মজীবনে তিনি দৈনিক গণকণ্ঠে কাজ করেছেন। বর্তমানে নিয়মিত কলাম লিখছেন প্রথম আলো পত্রিকায়। তার লেখা অধিকাংশ বই-ই প্রকাশিত হয়েছে প্রথমা প্রকাশন থেকে।