জীবনে কোনও কাজ করা, কথা বলা, চাহিদা ও লক্ষ্য পূরণের জন্য শত শত বিকল্প রয়েছে। এসব বিকল্প জীবনকে একদিকে যেমন করেছে অত্যন্ত জটিল, অন্যদিকে করেছে বৈচিত্র্যময়। একজন মানুষ যেকোনও প্রয়োজনে (ছোটো বা বড়ো, গুরুত্বপূর্ণ বা কম গুরুত্বপূর্ণ) তার সক্ষমতা অনুযায়ী বিকল্প শত শত পথ থেকে একটি পথ বেছে নিয়ে এগিয়ে যায়। সেই পথটিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনশীল। ভবিষ্যতে যদি তার সক্ষমতার পরিবর্তন হয় এবং সে মনে করে অন্য কোনও বিকল্প পথে এগোবে, সে তা-ও করে থাকে। এসব বিকল্প পথ থেকে কেউ কোন পথটি বেছে নেবে, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্যক্তির নিজস্ব বিচার, বুদ্ধি ও জ্ঞানের ওপর। যদিও সে অনেকের কাছ থেকে পরামর্শ বা বিভিন্ন ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে থাকে; কিন্তু নির্বাচিত পথটি ভুল হোক বা শুদ্ধ, তা বেছে নেওয়ার সম্পূর্ণ দায়ভার তার ওপরেই বর্তায়। এই পরিস্থিতিতেই জটিল সমস্যার উদ্ভব হয়। পৃথিবীতে অনেক মানুষেরই সেই জ্ঞান বা সাহস নেই, বিকল্প কোন পথটি বেছে নেবে। তাই সে বিভিন্ন মানুষের শরণাপন্ন হয় এবং তদনুযায়ী এগিয়ে যায়। কিন্তু যারা প্রকৃত জ্ঞানী, তারা জানে যে জীবনের কোনও পথই সোজা ও মসৃণ নয়। যেকোনও পরিস্থিতির কারণে সবচেয়ে ভালো পথটিও ব্যর্থ হতে পারে। তাই তারা পথ নির্বাচনে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। এই সুযোগ লুফে নেয় কিছু খারাপ মানুষ। কারণ তারা যেকোনও সময়ে যেকোনও অঙ্গীকার, তাদের সুবিধামতো অস্বীকার করে অভ্যস্ত। তারা এই সুযোগে তাদের সুবিধামতো পথটি নির্বাচনে গুরুত্ব দেয় এবং বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দিকে সুবিধা নিয়ে থাকে। অনেক ব্যক্তি আবার তাদের নিজস্ব সক্ষমতা, অবস্থান এবং সুবিধা বিবেচনা করে অন্যকে পথ নির্বাচনে সহযোগিতা করে; সাহায্যকারীর সক্ষমতা, অবস্থান বা সুবিধা বিবেচনায় রাখে না। কোনও কাজের বিকল্পসমূহের একটি উদাহরণ বিবেচনা করা যেতে পারে। যদি একজন ব্যক্তির লক্ষ্য থাকে পাঁচশত কিলোমিটার দূরত্বের কোনও শহরে গিয়ে একটি কাজ সম্পন্ন করা। তাহলে তাকে অনেক বিকল্প থেকে একটি পথ বেছে নিতে হয়। বিকল্পসমূহ নির্বাচনে নিয়ামক বিষয়সমূহ হতে পারে-ব্যক্তির অর্থনৈতিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা, কাজটির সময় ও গুরুত্ব, যানবাহন (জল, স্থল বা আকাশ পথ), যানবাহনের শ্রেণি, পারিবারিক অসুবিধা, শারীরিক অসুস্থতা, অন্যান্য কাজ, ঝুঁকি, আবহাওয়া ও অন্যকে দিয়ে কাজটি করানো ইত্যাদি। এরকম নানাবিধ বিকল্প থেকে তার জন্য উপযুক্তটি বেছে নেওয়া। অথবা কোনও ব্যক্তি যদি তার জন্য উপযুক্ত কোনও পেশা নির্বাচন করতে চায় সেক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। পেশা নির্বাচনে নিয়ামক বিষয়সমূহ হতে পারে-প্রার্থীর শিক্ষা, বয়স, যোগ্যতা, শারীরিক সক্ষমতা, ব্যক্তিগত পছন্দ, পারিবারিক ইচ্ছা, অর্থনৈতিক অবস্থা, ভৌগোলিক কারণ, সুযোগ-সুবিধা, সহজলভ্যতা, দূরত্ব, ঝুঁকি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়। এভাবে জীবনের প্রতিটি কাজে শত শত বিকল্প থেকে কোনও ব্যক্তির সক্ষমতা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে, উপযুক্ত বিকল্পটি বেছে নিয়ে, তার জ্ঞান ও পরিশ্রমের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে এগিয়ে যাওয়াই সার্থক জীবনের পূর্বশর্ত। সার্থক জীবন ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হয়। কারও জীবন যেসব অর্জনে সার্থক হয়, অন্যদের জীবনে হয়তো সেসব অর্জন উল্লেখযোগ্য কোনও ভূমিকাই রাখে না। প্রত্যেক মানুষের জীবনের মানদণ্ড আলাদা। ব্যক্তির নিজস্ব সক্ষমতা, পরিবার ও অন্যদের সহযোগিতা, ভৌগোলিক অবস্থা ও প্রাপ্ত অনেক সুযোগের যথাযথ ব্যবহার; ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে, কারও জীবনের মানদণ্ড কেমন হবে। সবাইকে জীবনের একই মানদণ্ডে পরিমাপ করা, আর প্রত্যেক প্রাণীকে গাছে ওঠার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আয়োজন এবং বিজয়ী ঘোষণা করা একই কথা। আর. কে. পাল ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩