আমাদের বাংলা ভাষায় যত রকমের অভিধান তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে শব্দ ও শব্দার্থের অভিধানই প্রায় শতকরা নিরেনব্বই ভাগ বা তারও বেশি। তার কারণ এগুলির বেশিরভাগই সাধারণ অভিধান (general use dictionary) যাতে শব্দটির অর্থ ও প্রতিশব্দ সন্ধান করেন পাঠকেরা। সেই সঙ্গে বানানটিও হয়তো দেখে নেন। এই ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রছাত্রী বা বাংলার শিক্ষক-শিক্ষিকা। বিশেষাৰ্থক অভিধান (special use dictionary) আমাদের ভাষায় খুবই কম। নামের অভিধান (ইসলাম ও হিন্দু নামের) বাংলাদেশে যত বেরিয়েছে এ বাংলায় সে তুলনায় খুবই কম দেখেছি। থিসরাস জাতীয় অভিধানের চেষ্টা বহু দিন আগে প্রাণতোষ ঘটক করেছিলেন, কিন্তু রোজেটের থিসরাস অনুসরণে বাংলায় লগ্নার্থক শব্দের অভিধান প্রথম প্রণয়ন করেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি হাবীবুর রহমান খান যথা শব্দ নামে; পরে বন্ধুবর অশোক মুখোপাধ্যায় সমার্থশব্দকোষ নামে একই আদলের একটি জনপ্রিয় গ্রন্থ লেখেন। কাগজে পত্রে ‘শব্দ-ধাঁধার' উৎসাহীদের কাছে এ গ্রন্থগুলি এখন প্রায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বানান অভিধানও গত শতকের নব্বইয়ের বছরগুলিতেই প্রথম মানুষের নজরে আসে। এ বিষয়েও বাংলাদেশের উদ্যেগই সর্বাগ্রে লক্ষ করা যায়— ঢাকায় বাংলা একাডেমীই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাঁদের বানানবিধি অনুসারে একটি বানান অভিধান প্রকাশ করেন যার মূল স্থপতি ছিলেন বন্ধুবর ডা. জামিল চৌধুরী। আরও কত এই ধরণের বিশেষার্থক অভিধান করার সুযোগ আছে। সব খবর জানি না। কিন্তু ইতিহাসের অভিধান, পদার্থবিদ্যার অভিধান, প্রাণবিদ্যার অভিধান, উদ্ভিদবিদ্যার অভিধান, কম্পিউটার অভিধান – ইত্যাদি দু'দেশেই কিছু কিছু প্রকাশিত হয়েছে, তা লক্ষ করে খুশি হই।