একসময় বাংলা কিশোর সাহিত্যের উদগ্রীব পাঠক নানা ধরনের সাহিত্য রস পান করা সত্ত্বেও সেখানে বড়ই অভাব ছিল এক ধরনের রসের তা হল বাংলায় অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি। এমন কোনো কাহিনি ছিল না যেখানে অজানার আকর্ষণে আর দুঃসাধ্য সাধনের উৎসাহে ছোটদের মনে বিপদ-বাধার সঙ্গে লড়াই করবার দুঃসাহস যোগাবে। ঊনবিংশ শতকের গোড়ায় বাংলা শিশু- কিশোর সাহিত্যে "মৌচাক" পত্রিকা ছিল এক অবিচ্ছেদ্য নাম। সে সময়ে মৌচাক পত্রিকার সম্পাদক সুধীরচন্দ্র সরকারকে হেমেন্দ্রকুমার রায় বলেছিলেন- "অ্যাডভেঞ্চার গল্প হচ্ছে বিলেতের ছোটদের সাহিত্যের একটি প্রধান অবলম্বন। আমার মনে হয় এখানেও ছোটদের মহলে এরকম রচনার আদর কম হবে না। একবার পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়?” প্রত্যুত্তরে সায় দিয়েছিলেন সুধীরবাবু। ১৯২৩-এ "মৌচাক” পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল কালজয়ী উপন্যাস "যকের ধন”। এই উপন্যাসে হেমেন্দ্রকুমার নিয়ে এলেন এক জোড়া চরিত্র-বিমল ও তার বন্ধু কুমার যারা কিনা খাঁটি বাঙালি হয়েও জড়িয়ে পড়তে চাইত নানারকম ভয়ংকর অভিযানে ও বিপদের মধ্যে। সঙ্গে ছিল কুমারের পোষা কুকুর বাঘা ও বিমলের বিশ্বস্ত চাকর রামহরি। গুপ্তধনের সন্ধানে তারা পাড়ি দিয়েছিল দুর্গম খাসিয়া পাহাড়ে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এই উপন্যাস। এই কাহিনির মাধ্যমে বাংলা কিশোর সাহিত্যে খুলে গেল এক নতুন দরজা যা অ্যাডভেঞ্চার-এর টানে মুগ্ধ করল ছোট-বড় সবাইকে। বাঙালির আপন হয়ে গেল বিমল-কুমার চরিত্র দুটি।