১৫ আগস্ট ১৯৭৫ । একটি দেশের জনক; একটি দেশের রাষ্ট্রপতিকে স্বপরিবারে খুন করে চলে গেল ঘাতকেরা। আরো খুন করে চলে গেল জাতির জনকের বর্ধিত পরিবারের প্রায় সকলকে... ভগ্নিপতি, ভাগ্নে। আরো খুন করল মোহাম্মদপুরের ঘুমন্ত ১৩ জন নিরীহ মানুষকে। সে রাতে মোট খুনের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৪ । অতঃপর ক্ষমতা দখল করে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঠিক ৪১ দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ ‘ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ)' নামক এক বিরল, নিষ্ঠুর ও অদ্ভুতুড়ে আইন প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করেন। যেখানে বলা হয় ১৫ আগস্টের এই সমস্ত হত্যাকাণ্ড বা এর পরিকল্পনা কোনো কিছুরই বিচার কিংবা এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো প্রশ্নই কোনো আদালতে কখনোই উত্থাপন করা যাবে না। মোশতাকের জারি করা এই অধ্যাদেশ ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল তারিখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়ার শাসনামলে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে পাশ করা হয়। সংবিধানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় আইনি বৈধতা। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশই একমাত্র রাষ্ট্র যে দেশের সংবিধানে ‘হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে পারবে না', এমন অধ্যাদেশ আইন আকারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর এই আইন বাতিল হয় এবং এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারও হয়। কিন্তু এই যে এমন অধ্যাদেশ জারি করা, সংবিধানে আইন আকারে যুক্ত করা, বাতিল হওয়া, বিচার হওয়া এসব কিছুরই একটা দীর্ঘ গল্প রয়েছে। কার মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল এই ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স' পরিরকল্পনা? কী হয়েছিল ১৯৭৯ সালের সংসদে? কীভাবে এই কালো আইন ঢুকে গেলো সংবিধানে? কীভাবে সেই বাধা অতিক্রম করে বিচার হলো? এই আইনকে ঘিরে কী কিংবা কেমন রাজনীতি হয়েছিল দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর জুড়ে? ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের আইন নিয়ে কারা রিট আবেদন করেছিল সর্বোচ্চ আদালতে? কী বলেছিল তারা? কী ছিল আদালতের ভাষা কিংবা পর্যবেক্ষণ? সমস্ত প্রশ্নেরই উত্তর রয়েছে ইনডেমনিটি নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো রচিত এই আইন ও ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থে। আইনজীবী নিঝুম মজুমদার এবার আমাদের সেই দীর্ঘ, অদ্ভুত ও ক্লান্তিকর পথ পরিক্রমার গল্প বলেছেন। এক বিচিত্র ইতিহাস ও আইনি জগতে পাঠকদের আমন্ত্রণ...