চতুর্থ শিল্পবিপ্লব―এই শব্দ দুটি বর্তমান সময়ে কতটা গুরুত্ব বহন করে সেটা বলাই বাহুল্য। বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও প্রকৌশলী ক্লাউস শোয়াব ২০১৬ সালে ‘দি ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন’ পুস্তকটি রচনার সাথে সাথেই সমগ্র বিশ্বে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে যায়। আজ আইটি বিষয়ক, ক্যারিয়ার গঠন বিষয়ক কিংবা কর্পোরেট বিজনেস সেমিনার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম পর্যন্ত একে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। সারা বিশ্বের নামকরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে চালাচ্ছে গবেষণা। বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও ভবিষ্যবাদীরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মার্কিন সিনেট, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। কী এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব? কেনই বা একে নিয়ে এত তোলপাড়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এমন একটি সময় যেখানে ভৌত, জৈব ও ডিজিটাল প্রযুক্তির মাঝে আর কোনো সীমারেখা থাকবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা, ন্যানোপ্রযুক্তি, ব্লকচেইন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জিন এডিটিং, ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং, সর্বব্যাপী কম্পিউটার, স্ব-চালিত গাড়ি, পরিধানযোগ্য ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, ক্লাউড কম্পিউটিং, সর্বজনীন ডাটা স্টোরেজ, ফিনটেক, ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস, স্মার্ট হোম, স্মার্ট সিটির সমন্বয়ে এমন এক যুগের সূচনা হতে চলেছে যা পৃথিবীকে প্রকৃত অর্থেই ক্ষুধামুক্ত, চরম দারিদ্র্যমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত করে গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু সেইসাথে সম্ভাবনা আছে চরম বেকার সমস্যা, অসমতা, ডিজিটাল ডিভাইড, চরম টেকনো ফ্যাটিগ, নব্য-লুডিজম ইত্যাদির উত্থান হবার। অনেক বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা জারি করেছেন, বিশ্বব্যাপী ১৫০ কোটি মানুষের বেকার হয়ে যাবে; সেইসাথে প্রকট আকার ধারণ করবে শরণার্থী সমস্যা এবং রাজনৈতিক সংঘাত। ভবিষ্যৎ দিনের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের আশার আলোও দেখিয়েছেন অনেকে। কারণ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নতুন নতুন চাকরি ও বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা তৈরি করবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশকে থামানো কিংবা সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। তাই ভবিষ্যৎকে ভয় না করে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিসমূহ, এই বিপ্লবের পথে প্রতিবন্ধকতা, বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব এবং বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রের সম্ভাব্য করণীয় বিষয়বস্তু নিয়েই লেখা ‘বিপ্লব ৪.০ : ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গল্প’।