বাঙালি পেরিয়ে এসেছে ঔপনিবেশিক শাসনের যাতনা; সয়েছে এবং বয়ে চলেছে দেশভাগের যন্ত্রণা; ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের সূত্রকে মিথ্যা প্রমাণ করে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালোবেসে রক্ত দিয়ে মুক্তিসংগ্রাম করে নিজের মাটির অধিকার নিয়েছে, নিজের স্বাধিকার আর স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবগাথা রচনা করে তার উত্তর প্রজন্মকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে হাঁটবার স্বপ্ন দেখতে প্রাণিত করেছে। সেই বাঙালিই তার আবহমান সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর সহনশীলতাকে পাশ কাটিয়েছে; বিচ্যুত হয়েছে প্রকৃত ইতিহাস থেকে। তারপর একান্ত নিজস্বতা, সভ্যতা আর ঐতিহ্যকে এড়িয়ে, মাড়িয়ে নিজেই নিজের কাছে হয়ে উঠছে অচেনা। আবার বৈশ্বিকতা আজকের বাঙালির বাঙালিয়ানাকে ছুঁয়েছে নানান ভাবে, নানান মাত্রায়। সব কিছুর পরও একুশ শতকের বাঙালির মধ্যেও রবীন্দ্রনাথের সেই ঊনিশ শতকের বাঙালির দেখা মেলে। আবার প্রায়শই নতুন ও জটিলতর ভাল-মন্দে কিংবা পরস্পরবিরোধী দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জর্জরিত বাঙালির দেখা মেলে; যে কিনা ভক্তি, মুক্তি আর যুক্তির নিত্যকার প্রশ্ন ও উত্তরের অসঙ্গতিতে পরাস্ত। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালির অন্তরমহল বইয়ে একুশ শতকের বিহ্বল ও খানিক বিভ্রান্ত বাঙালির জাগতিক, মানসিক, সৃজনশীল আর বৌদ্ধিক জগৎচেতনা নিয়ে তার যে বাঙালিয়ানা তাকে ব্যক্তিগত মত ও বোধের ভেতর দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন ড. নিরুপমা রহমান।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক। পাশাপাশি উচ্চতর ও বৈশ্বিক শিক্ষাপদ্ধতি উদ্ভাবন আর তার প্রায়োগিক পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে গবেষণা করছেন। উপমহাদেশখ্যাত গুরুদের কাছে দীর্ঘদিন শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিয়েছেন। সাধনা করে চলেছেন শাস্ত্রীয় সংগীত আর বাংলা গানের। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা গান, তার বাণী ও সুরের মেলবন্ধনকে খুঁজে বেড়ানো, তাকে মননে ও ভাবে ধারণ করবার নিরন্তর প্রয়াস অভিবাসী জীবনে ড. নিরুপমার বাঙালিয়ানার নিরন্তর উদযাপন।