মানবজাতির ইতিহাসে বারবার প্লেগ, গুটিবসন্ত, নানা রকম জ্বর, কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে ছিনিয়ে নিয়েছে বহু মানুষের জীবন। সভ্যতাও ধ্বংস হয়ে গেছে মহামারীতে। আড়াই হাজার বছর ধরে মহামারীতে মানুষের নাকাল হবার খবর ইতিহাসে পাওয়া যায়। ওল্ড টেস্টামেন্ট, কুরআন, হাদিসে মহামারীর কথা আছে। আছে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও। মহামারী মানুষের জীবনকে যুগে যুগে আমূল বদলে দিয়েছে। জীবনাচরণে পরিবর্তন, ধর্মচর্চা বৃদ্ধি, কোয়ারেন্টিনে বসবাস, নগর পরিকল্পনায় পরিবর্তন, নৈতিক স্খলন, মানুষের বিপদকে পুঁজি করে বিত্তবান হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক আচরণের বদল ঘটেছে। কিন্তু মহামারীর অভিজ্ঞতা শিল্প-সাহিত্যের স্থায়ী সম্পদে পরিণত হয়েছে। রোগাক্রান্তদের সাথে অন্য মানুষের, সমাজের আর রাষ্ট্রকাঠামোর যে নিষ্ঠুরতা, শঠতা, অমানবিকতা আর সীমাহীন অদক্ষতা, অনাচার আর নীতিহীনতা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক মানের অবনমনের পরিচয় শিল্পসাহিত্যে তুলে ধরা হয়েছে। বিস্ময়করভাবে এইসব অপসংস্কৃতি শত শত বছর পরেও একই চেহারায় ফিরে এসেছে। সাধারণ মানুষকে জীবন দিয়ে, কষ্ট পেয়ে এর কুফল ভোগ করতে হয়েছে। সবসময় মহামারী শুরু হবার পর একে অস্বীকারের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবারই কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দেরি করেছে। প্লেগের কারণে মৃতের সংখ্যা কম দেখাবার জন্য মৃত্যুর কারণ হিসেবে নতুন নতুন রোগ আবিষ্কার করে ফেলেছে। মহামারী মোকাবেলায় গৃহীত ব্যবস্থাপনায় দেখা গেছে ঢিলেমি আর অদক্ষতা। ফলে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে অতি দ্রুত। করোনাকালেও ইতিহাসের সেই করুণ পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে দেশে দেশে। এই বইতে মহামারী নিয়ে মানব জাতির সেই বেদনার উপাখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।
এ.টি.এম. মোস্তফা কামাল জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৬৬। দুই ছেলে নিয়ে টোনাটুনির ঘরবসতি। পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী জেলায়। চাকুরিসূত্রে দেশের নানাপ্রান্তে বসবাস করেছেন। এখন ঢাকায় বাস করছেন, সেটাও চাকুরিসূত্রেই। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির নেশায় আক্রান্ত। মূল ভালোবাসা কবিতার জন্য। তেত্রিশ বছর হয়ে গেলো কবিতার আরাধনায়। কবিতা এখনও কথা রাখেনি। ধরাও দেয়নি কবিতাসুন্দরী। মাঝে মাঝে গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, ভ্রমণকথা লেখা হয়। এটি দ্বিতীয় গ্রন্থ। প্রথমটিও ছিলো কবিতার বই- বাঙ্গালা রুবাইয়াৎ (২০০৯)। কবিতায় রোমান্টিকতা, মরমিয়াবাদ, সুফিবাদ আর আবহমান বাংলার সহজিয়া দর্শনকে ধরার চেষ্টারত। বাংলার গণমানুষের মতো মিলযুক্ত কবিতার প্রতিই চিরকালের মমত্ব। এ বইতেও তাই মিলেরই খেলা চলেছে।