স্পার্টাকাস- যিনি ইতিহাসের গতিমুখ বদলাতে চেয়েছিলেন। দোর্দন্ডপ্রতাপ রোমান পরাশক্তির পতনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। গড়তে চেয়েছিলেন দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্ত নতুন সমাজ। যিনি দ্রোহের মশাল জ¦ালিয়ে দাসদের মুক্ত মানবিক জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন; সাম্রাজ্যের আবাদভূমির প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দাসত্বমুক্তির নতুন সমাজ রচনার জন্য মানবিক জীবন অর্জনের আলো। উড়িয়েছিলেন যুগযুগ ধরে চলমান শৃঙ্খলিত আজ্ঞাবহ দাসত্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দ্রোহের রক্তিম পতাকা, এ্যারিনায় আত্মঘাতী দ্বন্দ্বযুদ্ধের গ্ল্যাডিয়েটারদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভকে সমন্বিত করে বাজিয়েছিলেন প্রতিবাদ-প্রতিরোধের দামামা। জাতপাত একাকার করে দাসত্ব মুক্তির আহ্বান জানিয়ে শামিল করেছিলেন বিদ্রোহে বিভিন্ন জনপদের দাসদের। পযুর্দস্ত করে চলেছিলেন সামন্ত শক্তি আর তাদের রক্ষীদলকে। গড়ে তুলেছিলেন অকুতোভয় দাসযোদ্ধা দল। একজন স্পার্টাকাস হয়ে উঠেছিলেন অসংখ্য বীর স্পার্টাকাস। কেঁপে উঠেছিল রোম শাসকদের সামাজিক অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তি দাসব্যবস্থা। স্পার্টাকাস ইতিহাসের এক পরাজিত মহানায়ক। ইতিহাস তার সময়ের চাহিদার প্রয়োজন মিটাতে এগিয়ে যায় আপন গতিতে। এই গতি সঞ্চারের চাকাকে লক্ষাভিমুখে নিয়ে যাবার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন যুগমানব মৃত্যুঞ্জয় র্স্পাটাকাসেরা। যুদ্ধে জয়ের মহিমা যেমন গীত হয়, তেমনি পরাজয়ের পরিণতি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও করুণ বিষাদের চিত্র এঁকে দেয়। দাসবিদ্রোহে বন্দি স্পার্টাকাসসহ প্রায় ষাট সহস্রাধিক দাসযোদ্ধার রোমের প্রবেশ পথ থেকে কাপুয়াভিমুখে অপপিয়ান রাস্তার দুপাশে লটকে রাখা ক্রুশবিদ্ধ যন্ত্রণাকাতর বিক্ষত দেহগুলো এখনো বঞ্চিত মানুষের ক্ষুব্ধ মনকে বিষাদে আচ্ছন্ন করে। সংক্ষুব্ধ মানুষের মুষ্ঠিবদ্ধ হাতগুলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। দাসেরা ছিল পণ্য- গবাদিপশুর মতো; নিজেদের জীবন বা আকাক্সক্ষা বলতে কিছু ছিল না। অথচ ওদের শ্রমে সামাজিক জীবন সচল ও সভ্যতা নির্মাণের অগ্রগতি সাধনের বিষয়টি স্বীকৃত নয়। ক্ষমতার দম্ভে পরিপুষ্ট অপশক্তি মানবিকতা ও মানুষের মৌলিক অধিকারকে এখনো দলিত মথিত করে চলেছে। অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে স্পার্টাকাসেরা যে আলোকবর্তিকা জ¦ালিয়েছিলেন, তা যেন আমাদের সমাজে বিরাজমান অমানিশা দূরিকরণে পথ দেখায়। স্পার্টাকাস অধিকারবঞ্চিত মানুষের লড়াইয়ের প্রতীক। ওকে সামনে রেখেই আমার ‘স্পার্টাকাস ও অন্যান্য কবিতা’ গ্রন্থের কাব্যভাবনার প্রকাশ।