ঘটনাবহুল বসন্তের রাত একটি বসন্তের রাত। বাইরে আকাশভাঙা জ্যোৎস্না। নির্জন পল্লীর প্রতিটি ধুলিকনার বুক চুমে যায় সেই আলো। গাছের লতাপাতাগুলো গুনগুন করে গান গেয়ে যায় সেই সাথে। আর তখন বিশাল একটা আঙিনার মাঝখানে আমরা কয়েকজন বন্ধু বান্ধবীরা মিলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের গল্প গুজব করতেছিলাম। আর এটি ছিল প্রায় একযুগ আগে তৎকালীন আমাদের এক ফ্রেন্ড এর বিয়ের অনুষ্ঠানের একটি রাত্রি। অনুষ্ঠানে সব মানুষ যখন ব্যাস্ততার মধ্যে একদিকে, অন্যদিকে আমরা কয়েকজন বন্ধুরা পল্লীতে এক নির্জন প্রহর। কেউ বলে যাচ্ছে তার জীবন কাহিনী, কেউ ব্যর্থতার গল্প, কেউ আবার সুখের গল্প এবং রঙ্গ রসিকতা ইত্যাদি। আঙ্গিনাটি ছিল খোলা আকাশের নিচে। কিন্তু তার একপাশে ছিল বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। বাতাসের শনশন ডাক, ঝিঁঝি পোকার কন্ঠ, জোনাকি ও তারার মিটিমিটি আলো, সবকিছু মিলে এক অপূর্ব নির্জন রাত্রি। সেই রাতটির কথা আমাদের সকলের অন্তরে এখোনো স্মৃতি হয়ে আছে এবং সারা জনম স্মৃতি হয়ে থাকবে। যাক, অনুষ্ঠানের এক সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। আকাশের অবস্থাও আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যেতে থাকে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, আকাশে গুরুগুরু শব্দ, বিষণ্ণ ও গুরুগম্ভীর একটা প্রাকৃতিক আভাস। লোকজন যে যার কাজে ব্যস্ত, লোকজন ছোটাছুটি করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ এবং প্রকৃতি আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে এলো। চাঁদের আলো আবার সবুজ গাছপালার উপর এসে পড়তে লাগলো। সবকিছু মিলে তখন সেখানে এক ঘটনাবহুল, বিষন্ন এবং কিছুটা ভয়ানক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা কয়েকজন বন্ধুরা তখন একটু বাইরে চলে গিয়েছিলাম। সবখানে শুধু অনুষ্ঠানের আনন্দই বিরাজ করছে। আমরা সবাই মিলে সেদিন কত রকমের আনন্দ সেখানে উপভোগ করলাম। সবাই মিলে সেখানে পরিণত হয়েছিল এক মিলন মেলায়। এভাবে রাতটি গল্প গুজব আর আনন্দের মধ্যে দিয়ে কেটে গেল। আমার এক বন্ধু বলছিল যে, "সেই যে আনন্দঘন রাতটি চলে গেল, আর ফিরে আসবে না।" আমরা সবাই তখন চিন্তা করতেছিলাম, এমন একটি রাত সবাই সম্মিলিত ভাবে একত্রিত হয়ে আবার কখনো এভাবে বিধাতার কাছে ফিরে পাব কিনা জানি না। জ্যোৎস্নাময় আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিলো, আমরা সবাই যেন একসাথে স্বপ্নের পৃথিবীতে অবস্থান করছিলাম। এরই ফাঁকে সেই রাতে অন্যদিকে এমন একটি ঘটনাও যে ঘটবে, তা আমরা কখনো কেউ কল্পনাই করিনি। অনেক সময় সেই ঘটনাগুলো স্মৃতিমূলক রহস্যময় ঘটনা হিসেবে মনে পড়ে যায়। থাক সেসব কথা, তারপর ভোর হলো। সকাল গড়িয়ে গেল। সবাই যে যার বাড়ির দিকে রওয়ানা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। আসলে আমাদের কারো মন বাড়ি ফিরে যেতে চাইছিলো না৷ কিন্তু তবুও তো ফিরে যেতেই হবে যে যার গন্তব্যের দিকে এবং পরিশেষে সবাই যার যার বাসাই ফিরে গেলাম। তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার কথা আমার খুব মনে পড়ে গেল। কবিগুরুর ভাষায়, "এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে গভীর ক্রন্দন, যেতে নাহি দিব হায়! তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।"