কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের মধ্যবয়েসি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ঢুলু ঢুলু চোখে পাসপোর্টের পাতা উল্টিয়ে একটিও শব্দ উচ্চারণ না করে ভিসার উপরেই একটা সিল দিয়ে ছেড়ে দিলেন। মাস্ক খুলতে বলা তো দূরের কথা আমার চেহারার দিকে একবার তাকিয়েও দেখলেন না। আমার আগে একই কাউন্টার দিয়ে বেরিয়ে গেছেন অগ্রজ সহযাত্রী আনিসুর রহমান রানা ভাই এবং আমার স্ত্রী মাহবুবা বেগম হেনা। আমিই ছিলাম কাউন্টারের শেষ যাত্রী, আমার দিকে পাসপোর্টটা ঠেলে দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসার সম্ভবত আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। আসলে তো ঘুমাবার কথা আমাদের। রাত এগারোটায় ঢাকা থেকে উড়ে দোহায় ঘণ্টা দেড়েকের যাত্রা বিরতি দিয়ে স্থানীয় সময় সকাল আটটায় নেমেছি কায়রো। দোহার বিরতিটাও আসলে ছিল বিরতিহীন। সিকিউরিটি চেকিং এর পরে ছুটতে ছুটতে ভিন্ন টার্মিনালের গেট পর্যন্ত পৌঁছাবার আগেই বোর্ডিং শুরু হয়ে গেছে। চলতি পথে কখনোই ঘুমাতে পারি না, বিমানে তো একেবারেই নয়। এক মিনিটে ইমিগ্রেশন পার হয়ে যাবার ফলে ভেবেছিলাম যাত্রাটা খুব সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু দেশ থেকে দেশান্তরে যাবার পথে কোভিড-১৯ টেস্ট নামে নতুন যে যন্ত্রণা যাত্রীদের জীবনে যুক্ত হয়েছে ঢাকা এয়ারপোর্টের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তা ভুলে গেলেও কায়রোর কর্তৃপক্ষ মনে হলো মক্কেল ধরার একটা ফাঁদ পেতে রেখেছে। ফলে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হলো। গুটি গুটি পায়ে সামনে এগোবার পরে দেখা গেল ইজিপশিয়ানরা হাতে হাতে পাসপোর্ট ফেরৎ নিয়ে ডানদিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আর বাঁ দিকে জমে উঠছে পাসপোর্টের স্তূপ! হিজাবধারী মহিলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাকি পুলিশের লোক বুঝলাম না, আমাদের পাসপোর্ট রেখে দিয়ে একপাশে দাঁড়াতে বললেন। এক এক করে সকল ভিনদেশির পাসপোর্ট জমা নেবার পরে কর্মকর্তা গোছের একজন সেই পাসপোর্টের পাহাড় দুই হাতে তুলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে গেলেন কেউ জানে না।
স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ। ১৯৬৯ সাল থেকে শিশুকিশোর সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৮৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ছড়ার বই ‘উল্টো গাধার পিঠে’। এরপরে লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, ভ্রমণ কাহিনী, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ইত্যাদি। গল্পকার হিসেবে অর্জন করেছেন বিশেষ খ্যাতি। গল্প রচনায় তাঁর একটি নিজস্ব ধরণ রয়েছে। অভিজ্ঞতার সাথে জ্ঞান ও মেধার সমন্বয়ে তাঁর গল্প একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য পায়। চমৎকার তার বর্ণনাভঙ্গি। তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ শক্তি। বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলেন নিপুনভাবে। ভাষাগত দক্ষতা লেখকের অন্যতম বৈশিস্ট্য। তাঁর ভাষা সাবলীল, বলিষ্ঠ, প্রাণবন্ত। কৈশোরে অর্জন করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। মুক্তিযুদ্ধ তাঁর রচনা একটি মূল সূর। এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গতিপ্রকৃতি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামের শক্তি ও প্রেরণা একেবারে ভেতরের রূপটিকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন তার বেশ কিছু রচনা। আপন অভিজ্ঞতার আলোকে কিশোর তরুণদের শক্তি, সাহস ও উদ্দীপনাকে উপলব্ধি করতে পারেন বিশেষভাবেÑ যার ছবি পাওয়া যায় তার কিশোর গল্প-উপন্যাসে। লেখকের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩ জানুয়ারি বগুড়া জেলার তালোড়ায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ। পুণের ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায় চলচ্চিত্র বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। পেশাগত জীবনে টেলিভিশন অনুষ্ঠান নাটক ও প্রামান্য চিত্র নির্মাতা। প্রকাশিত গ্রন্থ : গল্প : মরণোত্তর, পাঁচটি প্রেম ও একটি যুদ্ধের গল্প, আরশি বিলাস, সুন্দরী ও কাঁকড়া।