মা চলে যাবার পর থেকে মাকে খুঁজে বেড়ানোটাই আমার কাজ হয়ে দাঁড়ালো। মায়ের শিল্পকর্ম, মায়ের শাড়ি, অদ্ভুত সব গহনা থেকে গাছপালা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনাতে মায়ের কর্মস্থল– যেখানে তিনি মাসের পর মাস ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, সেই অফিসঘর… শোবার ঘরের জানালা– যেখান থেকে প্রতিরাতে শোনা যেতো মানুষের আর্তনাদ! সেই সিঁড়িটা– যেখান থেকে মায়ের চুলের মুঠি ধরে পাকিস্তানি সেনারা টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে জিপে তুলেছিলো… কনসেনট্রেশান ক্যাম্প– যশোর ক্যান্টনমেন্ট…। বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ! স্বাধীন বাংলাদেশ!... বিভিন্ন সময় একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হই– বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মায়ের সন্তান হিসেবে কেমন দেখেছি মাকে বা সমাজজীবনকে। স্মৃতিচারণের মধ্যে দিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তরও ঘুরেফিরে এসেছে ছায়াপাখিতে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর যুদ্ধপরবর্তী সামাজিক লড়াইয়ের চিত্রটাও কিছুটা উঠে এসেছে আমার উপলব্ধি থেকে। যেখানে যেখানে মায়ের স্মৃতিচিহ্ন সেখানেই আমার বারবার ফিরে আসা। আমি একাত্তর দেখিনি, মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি– আমি আমার মাকে দেখেছি, দেখেছি তাঁর কপাল জুড়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যোদয়। বাইরের পৃথিবীর জানার বাইরেও মায়ের সাথে সম্পর্কে ছিলো দ্বিধা, দুঃখ-বেদনা ছাপিয়ে অভিমান আর ভালোবাসার বলা, না বলা গল্প। "ছায়াপাখি" আত্মজীবনী নয় বরং মা আর আমার একে অন্যকে খুঁজে ফেরার উপাখ্যান।