অন্য পাঁচজন আর্য সন্তানের মতোই তাদের যাযাবর জীবনে ঘন ঘন বাসস্থান পরিবর্তন, পশুচারণ, পশুশিকার, যৎকিঞ্চিত ফসল উৎপাদন আর যুদ্ধ দেখে বেড়ে ওঠেন বেগ । বাল্যকাল থেকেই দক্ষ যোদ্ধা হবার লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই অনার্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দারুণ সাহসিকতা, দক্ষতা, হিংস্রতা আর নিষ্ঠুরতা দেখানোয় সমগ্র ব্রহ্মাবর্তে এবং স্বর্গে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় তিনি ব্রহ্মাবর্তের নৃপতি নির্বাচিত হন। বেগের বাল্যসখা কুত্থান একজন গল্পকথক, আজন্ম ভবঘুরে স্বভাবের কুথান বিভিন্ন আর্য-অনার্য জনপদে ঘুরে ঘুরে মানুষকে গল্প শোনান। মানবতাবাদী কুধান চান আর্য এবং অনার্যরা যুদ্ধ ভুলে শান্তিতে বসবাস করুক, তাদের মধ্যে বাণিজ্য এবং সংস্কৃতির বিনিময় হোক। তাই তিনি যেখানেই যান যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির পক্ষে কথা বলেন। নৃপতি হবার পর কুথানের সংস্পর্শে বদলে যেতে থাকে বেণের মনোজগত, যুদ্ধের প্রতি অনীহা জন্মায় তাঁর। যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একসময় তিনি আর্য-অনার্য সকলের জন্য বাসযোগ্য এক সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তুলতে চান। ব্রহ্মাবর্তে মানুষের জন্য ক্ষতিকর মনুর বিধানসমূহ এবং যজ্ঞ নিষিদ্ধ করেন। স্বার্থে আঘাত লাগায় তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন ব্রাহ্মণ, ঋষি এবং দেবগণ। ফলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে, কিন্তু মানবতার মন্ত্রে দীক্ষিত বেণ সখা কুণ্ঠানের কাঁধে কাঁধ রেখে সব বাধা দূর করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বেণ আর কুধান সফল হন কি? এই আখ্যান ইতিহাস নয়, পুরাণ থেকে কেবল বীজটি নিয়ে বেণকে কান্ডারি করে তৎকালীন মানুষ, প্রকৃতি, ধর্ম ও সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, দণ্ডনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়সমূহ নিয়ে লেখা এক উপন্যাস ।