এই কাব্যগ্রন্থের ‘চন্দ্রাবতী’ একটি কাল্পনিক চরিত্র। কবিতায় এক বিশেষ মানসকন্যা। আমার কাছে তার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই; অথচ আমার সামনে সে সর্বরূপী এক দেদীপ্যমান মানুষ। সে কখনো নারী, কখনো পুরুষ, কখনো দেবতা, কখনো বিচারক, কখনো আবার নিজেই নিজের কাছে প্রতিবাদী হয়ে ন্যায়বিচার প্রার্থী কিংবা সমাজের বিবেক হিসেবে উপস্থিত। সে নিপীড়িত নিগৃহীত মানুষের প্রতিনিধি, আবার ভালোবাসার প্রতীক এবং পৃথিবীর সকল ভালোবাসার চেয়েও অনন্য ভালোবাসা প্রকাশের প্রমাণক চরিত্র। চন্দ্রাবতী কখনো মাতৃরূপে হাজির, কখনো আবার শাশ্বত প্রেমিকা। আবার সে মানুষ নয়, মাতৃভূমি স্বদেশ। আবার জন্ম-জননীও। সে আকাশ, বাতাস, সাগর, নদী, প্রকৃতি, মেঘ, মহাশূন্য সবকিছুরই প্রতিনিধিত্ব করে। সে যেমন বন্ধু হিসেবে সামনে এসেছে, আবার শত্রু হিসেবেও সক্রিয়। এজন্য যেন একই মুদ্রার দুদিকের দুই বিপরীত প্রতিনিধিত্ব সে একাই করতে পারে। এটাতে তার নিরপেক্ষতা ও সামগ্রিকতাই বহন করে বৈপরীত্য বা পক্ষপাতিত্বের বিষয় নয়। এই কাব্যগ্রন্থের সমগ্র কবিতায় চন্দ্রাবতীর এই বহুমাত্রিক উপস্থাপন যেন এক বিশেষত্ব অভিধায় চিহ্নিত। কোনো কোনো সময় চন্দ্রাবতীর এই বহুমাত্রিকতা আবার পাঠকের কাছে এক রহস্যের অবতারণা করতে পারে। সেজন্যই বলি, মাঝে মাঝে যেন কেউ তার কাছে সকলের পক্ষে সব বিবরণ উপস্থাপন করে। এই বর্ণনা সার্বজনীন। এজন্য সব কবিতার কথা যেন পাঠকের নিজের কথা, যা চন্দ্রাবতী কাউকে বলছে কিংবা চন্দ্রাবতীকে কেউ বলছে। এই বলার ভাষাও প্রশ্নাতীত।
জন্ম : শ্যামসুন্দর সিকদার শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার লোনসিং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম-গিরেন্দ্র মোহন সিকদার, মাতার নাম-কৃষ্ণদাসী সিকদার ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। মাটি-জল, খাল-নদী এবং শস্য-শ্যামল প্রকৃতি দেখে দেখে গ্রামীণ পরিবেশে তার কৈশোর কেটেছে। শিক্ষাজীবন : নিজগ্রাম দক্ষিণ লোনসিং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার প্রথমপাঠ শুরু। অতঃপর নড়িয়া বিহারী লাল হাই স্কুল, ফেনী মডেল হাই স্কুল এবং ফেনী কলেজে অধ্যয়ন করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে ১৯৮১ শিক্ষাবর্ষে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০০৮ সালে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে এমবিএ ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। কর্মজীবন : ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৪ সালের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৬ সালে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনসহ বিসিকের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে এবং ২০১৭ সাল থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে যথাক্রমে সচিব ও সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। সাহিত্যকর্ম : শ্যামসুন্দর সিকদার ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে জড়িত ছিলেন। তিনি একজন প্রথিতযশা কবি ও সাহিত্যিক। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৫০। তন্মধ্যে কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধ, গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, ছড়া, শিক্ষামূলক গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস এবং গবেষণামূলক গ্রন্থ। সাহিত্য ও গবেষণা কর্মের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক।