দারুল উলুম দেওবন্দ শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমাত্র নয়, এটি পাক-ভারত উপমহাদেশের জাতীয় জীবনের বহু কালক্রম, উত্থান ও চড়াইয়ের অনুঘটক। ইংরেজদের শাসন-ত্রাসনের যে ভয়াবহ নাগপাশ জড়িয়ে ছিল আমাদের গলায়—মূলত জীবনে, সে-শেকল ভাঙার গান প্রথম গেয়েছিলেন এ-শিক্ষাগারের বীরেরা—তাদের পূর্বসূরিরা। বর্তমান আজকের স্বাধীন তিনটি ভূখণ্ড—ভারত, পাকিস্তান ও বাঙলাদেশ যে অর্জন করেছে স্বতন্ত্র-পৃথক রাষ্ট্র—এ-সবের ভিত বিছানো ছিল এ অত্যাশ্চর্য মাটিতে, এর বীজ পোঁতা ছিল এখানেই। দারুল উলুম দেওবন্দ তাই বলে শুধু উপমহাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাদপীঠমাত্রই নয়, এ-বিদ্যানিকেতনের প্রাণ ও প্রাণনায় জড়ানো রয়েছে এক অনুপেক্ষ আদর্শের সুরমাধোয়া চোখ; এক জীবনকবির অবিনাশী অজর পঙ্ক্তির ছোঁয়ায় নির্মিত এর আদর্শের বীজতলা— তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দারুল উলুম দেওবন্দ তাই শিক্ষায়তন বা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক নিয়ামকগাহ হওয়ার পাশাপাশি উপমহাদেশের মুসলিমদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনেরও এক অচ্ছেদ্য অংশও। এর বিবরণ ও উপস্থিতি ছাড়া—আমরা যে-তরকা বা ঘরানারই হই না কেন—আমাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনের পাঠ অসম্পূর্ণ। যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্যই দারুল উলুম দেওবন্দ যাত্রা বিরল এক অভিজ্ঞতা। কোনো শিক্ষার্থীই সেখানে শুধুমাত্র বিদ্যার্জনের জন্য যান না; সেটি একটি উদ্দেশ্য বটে, একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। লেখক হাসান আজিজের দেওবন্দ-দর্শনও তেমনি আকাঙ্ক্ষাবাহিত এক বিষয়। সে-আকাঙ্ক্ষা কী, তা জানা যাবে তার রচিত তবু অনন্ত জাগে পাঠ করলে। তবু অনন্ত জাগে’র ‘তবু’র আগে কী ছিল! অনেক স্বপ্নভঙ্গ, ব্যথা-বেদনা, ভুল পাঠ, নাকি সময়ের অনুচিত ক্রুর কোনো খেলা? নামের মতোই কি এ-বই আশার দীপিত আলো আর 'তবু’র তমসায় ঘেরা? এ-প্রশ্নও তো জাগে...
জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে আমার জন্ম ১০ মে ১৯৯৪। যদিও পরিচিতজনেরা বলেন—আমি তারও এক বছর আগেই পৃথিবীতে চলে এসেছি। বাড়ি নরসিংদী জেলার মনোহরদীতে। বংশীয় পদবী ফরাজী/ফরায়েজী। জন্মের পর আব্বা-আম্মা মিলে নাম রেখেছেন আবুল হাসান মুহাম্মদ আজীজুর রহমান। সেখান থেকে কাটছাঁট করে বানিয়েছি হাসান আজীজ! এই কাটছাঁট করার পেছনে লম্বা গল্প আছে... আমার শিক্ষাজীবনের সিংহভাগ কেটেছে মালিবাগ জামিয়ায়। (মিজান থেকে দাওরা ও ইফতা) মাঝে এক বছর ছিলাম দারুল উলুম দেওবন্দে। বই পড়ার অভ্যাস পারিবারিকভাবে পেলেও লেখালেখির হাতেখড়ি মালিবাগ জামিয়ায়। জামিয়ার সাহিত্য মজলিস আমাকে শিখিয়েছে—লেখকরা ভিনগ্রহের কেউ নন; চাইলে আমিও লিখতে পারি। সেই শিক্ষাটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি; সফলতা-ব্যর্থতা নির্ধারণের দায় আপনাদের।