একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এ কাজের চিন্তার সূত্রপাত কিন্তু লেখার তো অভিজ্ঞতা নাই, পড়ারও নাই। আমি অর্থনীতির ছাত্র, তাই যে বিষয়ে লিখা সে বিষয়েও জ্ঞানের অভাব। আমি জানি না কোথা থেকে শুরু করে কোথায় যাবো। ২০০১ সালের নির্বাচনকালে সম্ভবত এ ধারণাটা মনে আসে যে আমাদের দেশের নির্বাচনগুলোর একটা তথ্যপঞ্জি করা যায় কিনা। আশেপাশের সহযোগী-সহকর্মীদের সাথে আলাপ করলাম। তেমন কোনো উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পেলাম না কারো কাছ থেকে। 'হৃদয়ে বুদবুদ মতো/উঠে শুভ্র চিন্তা কত/ মিশে যায় হৃদয়ের তলে/ পাছে লোকে কিছু বলে'-অথবা বলে না, তাই চিন্তাটি চাপা থাকে। কিন্তু বুদবুদ তো চেপে রাখা যায় না। ২০১০ সালের গোড়ার দিকে, সাহস করে কাজে নেমে পড়লাম। ভাবলাম বাংলাদেশ আমলের তথ্য বাংলাদেশে সহজে পাওয়া যাবে। লন্ডনে আছি ব্রিটিশ আমল থেকে কাজ শুরু করি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে খোঁজ করার উদ্যোগে হাউস অব লর্ড-এর এক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তেমন সুবিধা হলো না কাজ আগাতে। ভাবলাম লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিসে যোগাযোগ করব। এর মধ্যে জানা গেল ইন্ডিয়া অফিসের সব রেকর্ড ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে চলে গেছে। তাই সেখানেই গিয়ে হাজির হলাম একদিন। তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করল এবং তিন বছরের জন্য সদস্যপদ দিয়ে দিল। ব্রিটিশ লাইব্রেরির মহাসাগরে বালুকণা খুঁজতে গিয়ে তো আমি দিশেহারা। 'যাহা চাই তাহা নাহি পাই যাহা পাই তাহা ভুল করে চাই।' একটা কিছু হাতে নিয়ে যে কোথায় হারিয়ে যাই বা তলিয়ে যাই তার খেয়াল থাকে না। অভিজ্ঞ বা বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেছি আমাদের দেশে প্রথম কবে সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। আমার পারিপার্শ্বিকতা আমাকে এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। অজ্ঞ এবং অনভিজ্ঞ আমি ইতিহাস হাতড়াতে গিয়ে একসময় ১৯১৯ সালের আইনের সামনাসামনি হলাম। যাক একটা সময়সীমা তো পাওয়া গেল। এখানেই কি শুরু না আরো আগে? আমার তথ্যপঞ্জিতে কী কী তথ্য চাই? ওগুলো পাবো কোথায়? এই করে করেই তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়ে গেল। কিন্তু আমার কাজের আওতা ও পরিধি নির্ধারণ করতে অনেক সময় পার হয়ে গেল। আমার অজ্ঞতাই তার কারণ। আর এই অজ্ঞতাই আমাকে প্রথম ভাগ রচনায় উৎসাহিত করে। বিশেষ করে দ্বিতীয় অধ্যায়। শ্রদ্ধা ও কৃজ্ঞতাবোধ থেকে পঞ্চম অধ্যায়ের চিন্তা। বইটিকে পাঁচ ভাগে সাজানো হয়েছে। প্রথম ভাগটি পরিচিতিমূলক। এটি একটি সাধারণ প্রাসঙ্গিক আলোচনা। যে দেশকে নিয়ে এ গ্রন্থ সেই বাংলাদেশের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রথম অধ্যায়ে। কিছু তত্ত্বীয় বিষয় আলোচনা করা হয়েছে দ্বিতীয় অধ্যায়ে। বইয়ের মূল অংশে যে বিষয়গুলো (Concept) আসবে তার কিছু পরিচয় ও ব্যাখ্যা আছে এ অধ্যায়ে। তবে ইচ্ছা করেই ঐ বিষয়গুলোর কোনো সংজ্ঞা দেয়া হয়নি এখানে। কেননা প্রথমত সেটা করতে গেলে এ বইয়ের কলেবর অনেক বড় হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয়ত তা এ বইয়ের উদ্দেশ্য নয়। বইয়ের মূল বিষয়বস্তু সংসদ নির্বাচন। সংসদ সংবিধানের সৃষ্টি। আমাদের সংবিধান ও সংসদের ক্রমবিকাশের বিবরণ যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। নির্বাচন আয়োজন ও অনুষ্ঠানের মতো কষ্টকর ও চাপবহুল কাজটা যে সংস্থা করে-নির্বাচন-কমিশনপঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে তার ক্রমবিকাশের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ।