সন্ধ্যা নামতেই এখন ভুতুড়ে পরিবেশ আরও জাঁকিয়ে ধরে গোটা স্টেশন এলাকায়। এখানে রাতের অন্ধকারে ভ‚ত আর প্রেতাত্মারা হাঁটাচলা করে, নানা কাণ্ডকীর্তি করে বলে এখন লোকমুখে বিচিত্র গল্পকাহিনি শোনা যায়। বহু আগে থেকেই নিঝুমপুর স্টেশনটা ভূত-প্রেতদের আস্তানা ছিল। এখানে রেল স্টেশন হওয়ায় ভ‚ত-প্রেতরা মহাবিরক্ত হয়। তারাই বিভিন্ন সময়ে ট্রেন অ্যাকসিডেন্টের ঘটনা ঘটায়। ট্রেন আগুন লাগার ঘটনাগুলো তারাই ঘটিয়েছে বলে জনশ্রæতি রয়েছে। যে সিগন্যালম্যানের ভুলের কারণে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়ে অনেক যাত্রী প্রাণ হারিয়েছিল সেই মানুষটি ওই দুর্ঘটনার পর পাগল হয়ে গিয়েছিল। দিনরাত স্টেশনে বসে থাকত। আবোল-তাবোল নানা কথা বলত। সেই বলেছিল, এই রেলস্টেশনে ভ‚ত পেতিœর আড্ডা আছে, তারা রাতদিন এখানে ঘুরে বেড়ায়, কেউ তাদের না দেখলেও সে ঠিকই তাদের আনাগোনা দেখতে পায়। তারাই গভীর রাতে ভুল সিগন্যাল দিতে অদ্ভুত সব কাণ্ড করেছিল। অনেক চেষ্টা করেও ভ‚তের আছর থেকে মুক্ত হতে পারেনি সে। তার কারণে এতগুলো মানুষ প্রাণ হারালো অনুশোচনার আগুনে জ্বলে পুড়ে লোকটা উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। একদিন ভোরে নিঝুমপুর স্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছে বড় আমগাছের ডালে পাগল হয়ে যাওয়া সিগন্যালম্যানের ঝুলন্ত মৃতদেহটা পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমে অনেকেই মনে করেছিল পাগল মানুষটা হয়তো আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার পর ময়নাতদন্ত করে ডাক্তাররা যে রিপোর্ট দেয় তাতে দেখা যায়, কেউ তাকে মেরে আমগাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছিল। কারা পাগল হয়ে যাওয়া সিগন্যালম্যানকে মেরেছে সেই রহস্যের ক‚লকিনারা করতে পারেনি তদন্তকারী পুলিশ। মারা যাবার আগে লোকটা কেবলই, ‘অ্যাকসিডেন্টে যারা মরছে, তারা সবাই আমারে রাইতে মারতে আসে। গলা টিপ্পা ধরে, আমি শ্বাস নিতে পারি না, তাগো একেকজনের চেহারা ভ‚তের মতো, দেখলেই ভয়ে বুকের ভেতরটা শুকাইয়া যায়। ওরাই আমারে আর বাঁচতে দিবো না, অনেকবার বলছে। ওরা নাকি আমাকে চরম শাস্তি দিবো বলছে।’
Rezaul Karim Khokan- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত হন। বর্তমানে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন। স্কুল জীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির সূচনা। ব্যাংকিং পেশায় কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করছেন। গল্প-উপন্যাস, বিনোদন, অ্যাডভেঞ্চার, লাইফস্টাইল, অর্থনীতি, ব্যাংকিং প্রভৃতি তাঁর লেখার বিষয়বস্তু। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮।