অনেকদিন ভেবেছি মানুষ কবিতা কেন লেখে? শুধুই কি এজন্যে যে লোকে তাকে কবি বলবে! কিন্তু এ সমাজে কবি এমন কোনো রাজসিক উপাধি নয় বরং বৈষয়িক লোকের মুখে মানায় এমন একটি অদ্ভূত গালি। তবু সেই গালিটাকেই গায়ে মেখে যখন কেউ কবি হয়ে ওঠে, তখন স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে-কী আছে কবিতার স্বপ্নিল জগতে যা নেশা ধরায় একজন মানুষকে? ছিমছাম গোছানো মসৃণ জীবন থেকে একটানে নিয়ে যায় চরম অনিশ্চয়তার এক অনন্তলোকে। বাঙালি মাত্রই নাকি জীবনে দূরেকটি কবিতা লেখে। সঙ্গত কারণেই তাই প্রথম দিকে সৃষ্টির এক অপার্থিব আনন্দে আপ্লুত হলেও তাকে মুহূর্তের খেয়াল ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি নি। কাজের সাথে সাথে একদিন আবিষ্কার করলাম, কবিতা আমার কাছে আর নিছক কোনো খেয়াল নয় বরং এক অদ্ভুত ভালোবাসা, আত্মার অদৃষ্ট যাত্রা। আমার প্রায় সব কবিতায় মৃত্যুচেতনা ও বিচ্ছেদ এসেছে বারবার বিভিন্ন আঙ্গিকে। পেশায় চিকিৎসক হওয়ায় মৃত্যুকে আমি দেখেছি খুব কাছ থেকে। একদিকে সুস্থতা, অতুল বিত্ত আর বৈভবের দুর্মর অহংকার আর অন্যদিকে বর্ণিল জীবনের বিগত অধ্যায়ের কথা স্মরণ করে করে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া-মানুষের জীবনের এই দুই বৈপরীত্য অথচ সত্য আমাকে স্পর্শ করেছে দারুণভাবে। জীবনের তুচ্ছ প্রয়োজনগুলোকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা যখন নীতিবর্জিত যে-কোনো প্রতিযোগিতার অবতীর্ণ হতে একটুও কুণ্ঠিত হই না, ভেবে দেখি না শেষ পর্যন্ত কতটুকু আমাদের সঙ্গে যাবে আর কী রেখে যাব অনাগত আগামীর জন্য-তখন মনে হয় 'মৃত্যু'র মতো অনিবার্য সত্যটাকে মাথায় রেখে অন্তত একটিবার ভেবে দেখা দরকার বিধাতার দেওয়া অতুলনীয় উপহার এই জীবনটাকে মহৎ কিছু প্রাপ্তির আনন্দে কতটুকু ভরিয়ে তুলতে পারলাম। কখনো খুব প্রিয়, খুব কাঙ্ক্ষিত কিছু হারিয়ে আবার খুঁজে ফেরার মাঝেও জীবনের এক অনির্ণীত সার্থকতা নিহিত থাকে।