কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিসম্পদ দেখতে পাওয়া যায়। এ দেশে আছে বৈচিত্র্যময় বিপুল প্রাণিসম্পদ। আন্তর্জাতিক আনবিক গবেষণা সংস্থার (IAEA) গবেষণা মূল্যায়ন তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের কালো ছাগলকে (Black Bengal) বিশ্বের অন্যতম সেরা ছাগলের জাত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক সময়ে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটানো এবং কৃষিজমি চাষাবাদের জন্য আমাদের দেশে গবাদি প্রাণী ও হাঁস-মুরগি লালনপালন করা হতো। কিন্তু বিগত কয়েক বৎসরে এ অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। কৃষি জমি চাষ এবং ফসল মাড়াইয়ের কাজে এখন যন্ত্রের ব্যবহার ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। অপরদিকে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুষ্টিকর খাদ্য বিশেষ করে প্রাণিজ আমিষ খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে প্রাণিজ প্রোটিন যেমন দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিম ও মাংসের উৎপাদনে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও চাহিদার অর্ধেক এখনো ঘাটতি আছে। এই ঘাটতি মিটাতে বিদেশ থেকে প্রতি বৎসর বিপুল অংকের গুঁড়া দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য আমদানি করতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছোট-বড় গবাদিপ্রাণী ও হাঁস-মুরগির খামারগুলিতে বেকার লাখ লাখ যুবক ও মহিলাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। একই সাথে বড় বড় উদ্যোক্তাগণ এ খাতে বিনিয়োগ করছে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থাও এ খাতে ঋণের ব্যবস্থা করছে। এ ধরনের খামার স্থাপনের ফলে দেশের প্রাণিজ আমিষ চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ হচ্ছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযাগ্য ভূমিকা রাখছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞানের অভাবে গবাদি প্রাণী ও হাঁস-মুরগির খামারিরা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেক সময় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীনও হচ্ছেন। বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারাচ্ছে অথবা বিনিয়োগ অন্য খাতে সরিয়ে নিচ্ছে। আমি আমার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা, খামারি ও উদ্যোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এই গ্রন্থটি রচনা করার চেষ্টা করেছি।
Title
আধুনিক পদ্ধতিতে গবাদি প্রাণী—পোল্টি পালন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা