চন্দন আনোয়ার তাঁর প্রজন্মকালের অন্যতম শ্রমঘনিষ্ঠ কথাকার। ‘অক্টোপাসের হাসি’ উপন্যাসটি তাঁর শ্রমনিষ্ঠার আরেকটি প্রমাণ। কয়েকটি টেক্সট বা গল্প একত্রে মিলে ‘অক্টোপাসের হাসি’ কাঠামোগতভাবে উপন্যাসে রূপ নিয়েছে। প্রতিটি টেক্সট স্বতন্ত্রভাবে উপন্যাস হওয়ার দাবি রাখে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার আখ্যান নির্মাণ করতে গিয়ে লেখক সময়ের বিন্যাস ও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ভেঙে দিয়েছেন। ৬৩ জেলায় সিরিজবোমা হামলা দিয়ে আখ্যানের সূচনা, অতঃপর জঙ্গিবাদের উত্থান-বিকাশ, রাজনৈতিক তোষণ, দেশের সর্বত্র নিয়মিত বোমা বিস্ফোরণ ও মানুষের মৃত্যুর মিছিল, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের চরমরূপ, যুদ্ধাপরাধীর বিচার, শাহবাগের গণজাগরণ, হেফাজতের জাগরণ, মুক্তচিন্তক ও লেখক হত্যা, বাউলের ঘরবাড়িতে আগুন, রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠের দেমাগ ও রামুর ট্রাজেডি, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি, গ্রামের রাজনীতি, দুর্নীতি ও বাস্তবতার অর্থাৎ বিপন্ন বাংলাদেশের সার্বিক বাস্তবতার আখ্যানে সময়ের বিন্যাস ভেঙে প্রবেশ করে সাঁওতাল বিদ্রোহ, নাচোলের তেভাগা আন্দোলন তথা মাতলা মাঝি ও ইলা মিত্রের বিদ্রোহ, দেশভাগের অব্যবহিত পরে পাকিস্তানের বামরাজনীতির পরিণতি, প্রথম জেলহত্যা অর্থাৎ খাপড়াওয়ার্ড হত্যাকাণ্ড (১৯৫০), শহিদ শামসুজ্জোহার আত্মত্যাগ ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নীহার বানু হত্যা ও গুম (সত্তরের দশকে দেশ-কাঁপানো অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড)-এর মতো নিকট-অতীতের ঘটনা। উপন্যাসের আখ্যানে বহুকৌণিক অলিগলি, যেখানে একটি ছোট ঘটনা বা ছোট চরিত্রও প্রধান চরিত্রের মতো পরিচর্যায় রচিত ও প্রতিষ্ঠিত।