কবিতা লেখা আজকের দিনে অন্য আর দশটা প্রাত্যহিক ঘটনার মতো হলেও কবিতা পড়ে ভালো লাগার ঘটনা বিরল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবিতায় যে জীবন থাকে সে জীবন নিন্দুকের কাছে ছন্দময়। কিন্তু নৈমিত্তিক জীবনে ছন্দহীনতাই আমাদের জীবনকে টেনে নিয়ে যায় জীবন থেকে দূরে। জীবনসন্ধানী মানুষ জীবনপরাম্মুখ হয়ে যেমন বাঁচতে পারে না তেমনি জীবনবহির্ভূত কবিতাও পাঠকের কাছে পৃথিবীর গল্প বলে না। এ কাব্যের কবি নিরুপম মণ্ডল পেশায় একজন শল্যচিকিৎসক। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি ইউরোলজি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। ডাক্তারির সঙ্গে সাহিত্য রচনার ঘটনা বাংলা সাহিত্যে বিরল কোনো ঘটনা নয়। আবার শখের সাহিত্য রচনার চল আজকের দিনে এমন প্রকট যে তাতে পেশাদার সাহিত্যিকরাও ভয়ে থাকেন। কবি নিরুপম মণ্ডলের কবিতায় তেমন বিস্ময়কর কিছু নেই। সমস্ত যুগের ইতিহাস ভেঙে এক নতুন যুগের সৃষ্টিও তিনি করতে চাননি। সমাজে ঘটে যাওয়া নৈমিত্তিক জীবনের প্রতিচ্ছবি তিনি প্রতিনিয়ত আঁকার চেষ্টা করেছেন তার কলমে। প্রেম-বিরহের দোলাচলে যেসব টুকরো ঘটনা প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনকে অর্থবহ করে তোলে, কবি তারই খণ্ডচিত্র আঁকতে চেয়েছেন তার কাব্যে। একটা মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনচিত্র কলমে তুলে ধরা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। সমাজ, রাজনীতি, প্রেম-বিরহ, আশা-প্রত্যাশা, সফলতা-বিফলতা সব ঘিরে যে জীবন সতত মৃত্যুপথযাত্রী, কবি নিরুপম মণ্ডল এ কাব্যে সেই প্রবাহমান জীবনের ছবিই এঁকেছেন। লেখার চমৎকারিত্বে পাঠক মন্ত্রমুগ্ধ হবেন এমন প্রত্যাশা করিনে, তবু বাস্তবধর্মী ও ভিন্নধর্মী কাব্যরসে পাঠকহৃদয় আপ্লুত হবেন এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারি। একজন চিকিৎসকের ব্যস্ত জীবনে কলম ধরার অবকাশ যেখানে স্বপ্নের মতো, সেখানে বিষয়বৈচিত্র্যে ভরপুর এমন একখানি কাব্য উপহার দেয়া আমার কাছে বিস্ময়কর। ভ্রাতৃত্বের অধিকারে কাব্যটি সম্পাদনা ও প্রকাশের সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। অণুজের অকৃত্রিম ভালোবাসাসহ সতত কবির কল্যাণ কামনা করছি এবং তার লেখনী আমৃত্যু সচল থাকুক এ প্রার্থনা করছি।
ডা. নিরুপম মণ্ডল ১৯৮১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট জেলায় মোংলা থানার বিদ্যারবাহন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নির্মল মণ্ডল এবং মা রীনা মণ্ডলের তিনি জ্যেষ্ঠ সন্তান। পশুরনদীতে মাছ ধরা ছিল বাবার প্রধান জীবিকা। পারিবারিক দারিদ্র্যের জন্য নির্মল মণ্ডলের কনিষ্ঠ পুত্র অনুপম মণ্ডল পড়ালেখার চেয়ে উপার্জনের পথকেই শ্রেয় মনে করেন। মেধাবী নিরুপম মণ্ডল অত্যন্ত সংগ্রামের মধ্যে পড়ালেখা চালিয়ে যান এবং কৃতিত্বের সঙ্গে ১৯৯৭ সালে দিগরাজ হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে খুলনা পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশুনা করার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ২০০৬ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি এমবিবিএস পাস করেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ২০১৯ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউরোলজিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিযুক্ত আছেন। ২০১০ সালে তিনি দীপা মল্লিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নিরুপম ও দীপা দম্পতির একমাত্র পুত্রসন্তান নির্বাপন মণ্ডল। শৈশব-কৈশোরের বন্ধু অনির্বান হালদারের সাহচর্যে নিরুপম মণ্ডল কবিতার প্রতি আসক্ত হন। লেখালেখির অভ্যাস গড়ে ওঠে ছাত্রাবস্থায়। কবিতাই নিরুপম মণ্ডলের লেখা এবং প্রতিবাদের প্রধান মাধ্যম। এ গার্হস্থ্য জীবন আমার নয় কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ।