ব্যুৎপত্তি নির্ণায়ক শাস্ত্র) আমার একটি সর্বাত্মক অনুসন্ধানের বিষয়। দীর্ঘ প্রায় দু- দশক এই সন্ধানক্ষেত্রে চষে বেড়াচ্ছি। এতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাষার শব্দের আন্তরিক ঐশ্বর্য আমার চোখে পড়ছে। দশকজোড়ের অভিজ্ঞতায় এই বিশ্বাস জন্মেছে যে, মূলবিচারে শব্দের স্বরূপ যেভাবে উন্মোচিত হয় অন্য কোনো উপায়ে তার রূপ সেভাবে ফোটেনা। এ প্রসঙ্গে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করা যেতে পারে। শাস্ত্রালোচনায় অনেক সময় তিনি তাঁর ভক্তদেরকে বিশেষ বিশেষ শব্দের তাৎপর্য বোঝাতেন মূল বা ধাতুবিচার করে। মরমীসাধক লালনফকিরের পদও মরমী, যা মর্ম (ধাতু) থেকে অনুভব করতে হয়। লোকপ্রিয় কথা লোকজ সুরে পরিবেশিত হয় বলে সাধারণ লোক স্রেফ কথা ও সুরের চটকে মুগ্ধ হন। ভেতরের বার্তা তাদের কাছে হয় ভাসাভাসা থাকে নতুবা একেবারেই বোধগম্য হয় না। তাই এই পদ অনেক সময় সম্পদ না হয়ে বিপদ তৈরি করে। এই সম্পন্নপদকে কৌতূহলী পাঠকের দরবারে পদস্থ করতে আমি ধাতুসুধার আশ্রয় নিয়েছি যা'ধাতুসুধায় লালনপাঠ'শিরোনামে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে। এতে তাঁর পদাবলীর প্রত্যেকটি চরণ ও পারিভাষিক শব্দাবলী মূল থেকে অর্থাৎ ধাতুবিচারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কাজটি নিঃসন্দেহে দুরূহ ও শ্রমসাধ্য। শব্দসাধনের কাজটি যেহেতু মূলকে অনুসরণ করেছে তাই এটি অমূলক নয়; এটা আমার একান্ত বিশ্বাস। 'ধাতুসুধায় লালনপাঠ-পড়ে কোনো পাঠক যদি তাঁর পদের কণামাত্র রসও আস্বাদন করতে পারে তা হলে আমার ধাতুরসিকতা কিছুটা হলেও সার্থক হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সাঁইজির বহুলপ্রচলিত আরও পঁচিশটি পদাবলী নিয়ে 'ধাতুসুধায় লালনপাঠ'-এর দ্বিতীয় খণ্ড রচিত হল।
তারিফ হোসেন জন্ম : ১৪ অক্টোবর, ১৯৬৬; কুষ্টিয়া। স্বর ও সুরলোকের বাসিন্দা। শব্দসাধনা ও গীতঅর্চনা তার নিত্য আরাধনা। ব্যুৎপত্তির ওপারে শব্দ-আত্মার আত্মিক ও বৌদ্ধিক অনুশীলনে তৎপর। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে নবমাত্রিক শব্দাভিধান ও গ্রন্থ প্রণয়নে নিরত আছেন। ধাতুসুধায় লালনপাঠ (দ্বিতীয় খণ্ড) গ্রন্থটি এই কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিক নমুনা।