দুলাল সরকার, বারবার পাঠে যাঁকে পুনরাবিষ্কার করতে চাই, বা করি, বা করতে হয়। ক্রমশ তাঁর একেকটি পঙ্ক্তি হয়ে ওঠে জীবনেরই অন্য এক উৎসারণ। বিচিত্র বিষয়ে, বিশেষত বাংলার প্রকৃতির অপার মহিমা, জীবনের সঙ্গে যার লীলাক্ষেত্র, তার সামনে তিনি নিঃশঙ্ক, পঞ্চভূতে মিলিয়ে যাওয়া ব্যক্তি মানুষ, বা টিকে থাকা মানবের স্বপ্নকুহক, তাঁকে স্পর্শ করি। যেভাবে তিনি স্পর্শ করেন পৃথিবীর ঘাস। তাঁর ভেজা পাজামা কবিতার খাতার মতোই আপন, সহজ। আধুনিক মনন ও মনীষার সঙ্গে তিনি আমাদের অলক্ষ্যে জুড়ে দেন পদাবলির সুর, গীতময়তা; যার প্রাণ বাঙালির চিরকালীন বৃক্ষ, নদী, বিপুলা শস্যক্ষেত্র ও বিচিত্র মানুষের-এই নিঃশ্বাস, স্বর আমাদের নিয়ে যায় দেখা-অদেখা সময়সমুদ্রের শীর্ষে, ফেনায়; এই ফেনা থেকে আফ্রোদিতি নয়, বাংলার কোনো শীতলপাটি উঠে আসে কাঁখে জলের কলস নিয়ে; রবীন্দ্রনাথ যার দেখেছিলেন ভেজা আলতামাখা চরণদুটি। এই নারী প্রেমিকা, অভিসারিকা, মাতৃজননী, কন্যা, বাংলার হৃদয়ের এক বিপুলা প্রাণ, আদিশক্তি। কবি দুলাল সরকার আশির দশক থেকে তাঁর অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন মাছের মতো জলের সহজ গভীর থেকে, কিন্তু তা চিরকালীন, যেন সান্ধ্যভাষার কাহ্নপা থেকে জীবনানন্দ হয়ে সেই মাছ এই শূন্যসাগরে ঘুরে ঘুরে জলের মতো একা কথা কয়। সেখানে দেখি দুলাল সরকার ক্রমাগত নিজের দেহকাঠ চিরে-চিরে অন্য এক অগ্নির আয়োজন করছেন। কাপালিক হয়ে নিজের এই জীবনপাত্র দান করছেন শিল্পের সুষমায়। আমাদের কাব্যপাঠের ইতিহাসে দুলাল সরকার ও তাঁর কবিতা জীবনেরই এপিঠ ওপিঠ। -জাহিদ সোহাগ