ফ্ল্যাপে লিখা কথা এই সময় একং সংকটের অন্তর্ভেদী বিশ্লেষক, স্বাধীনচেতা মানুষের প্রতিভূ, আমাদের একমাত্র মেরুদন্ড হুমায়ুন আজাদ যিনি ছিলেন একলা পর্বতের মতো উদ্ধত, বেঁচে ছিলেন নিঃসঙ্গ মহাবৃক্ষরুপে। জীবতকালে তাঁর বেশ কিছু সাক্ষাৎকার আমরা গ্রহণ করি। সেসব সাক্ষাৎকারে তিনি দেশ-রাজনীতি,ধর্ম-মুক্তিযুদ্ধ-সমাজ-সাহিত্য-নিষিদ্ধ গ্রন্থ, চলচ্ছিত্র এবং তাঁর ছেলেবেলা প্রসঙ্গে অকপটে প্রকৃত সত্য উচ্চারণ করেছেন নির্ভয়ে:যা সময়েরই অনন্য দলিল...... সূচি *মুক্তিযুদ্ধ ভাষা আন্দোলনের অবধারিত পরিণতি *শেকড় ছড়ানো সকল সূত্রে এককী ঘুণপোকা *সকলই অর্থহীন নির্বোধ অনুশোচনা প্রাককথন তুচ্ছদের প্রাদান্যের কালে যিনি নিঃসঙ্গ মহাবৃক্ষরুপে বেঁচেছিলেন তিনি এই সময়ের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা হুমায়ুন আজাদ। যাঁর ভেতরে অবিরাম রক্তক্ষরণ হয়েছে পাশব-বাস্তবের সঙ্গে অদৃশ্য যুদ্ধে। সে যুদ্ধেও যিনি ছিলেন একান্তই এককী। এক কিন্তু এই বাংলায় এভারেস্ট সমান উচ্চতা নিয়েই দাড়িয়ে ছিলেন তিণি। তাঁকে সেই একাত্তরের পরাজিত জল্লাদেরা হত্যা করেছে এই স্বাধীন ভূখন্ডে! কিন্তু তিনি তাঁর অসামান্য কীর্তির জন্য অবিনশ্বর থেকে যাবেন বাঙলা ও বাঙালির অন্তরে। পত্রিকার কাজে ঢাকা গেলে হাজার কাজের মাঝেও হুমায়ুন আজাদ স্যারের সঙ্গে দেখা করে আসতামই এবং সুযোগ পেলে কোনো না কোনো বিষয়ের উপরে জানতে চাইতাম , ভালো লাগলে স্যার উত্তর দিতেন নয়তো এড়িয়ে যেতেন। তেমনি ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণায় স্যারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি সানন্দে রাজী হন।এবং ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটারস্থ কক্ষে বিকেল তাঁর গুরুত্ব পূর্ন প্রতিক্রিয়াটি রেকর্ডে ধারন করি -যা ‘মুক্তিযুদ্ধ ভাষা আন্দোলনের অবধারিত পরিণতি ‘ শীর্ষক নামে মাসিক বলাকায় প্রকাশিত হয়। তেমনি অন্য দুটো সাক্ষাৎকার ছোট কাগজ ‘অর্কেস্ট্রা’ এবং ‘বিবর্তন’- এ প্রকাশিত হয়েছে। তাদের অনুমতি নিয়ে সাক্ষাৎকার দুটোও এ গন্থে সূচিবদ্ধ হল। শরীফা বুলবুর ২৮ জানুয়ারি ২০৭,চট্রগ্রাম
প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত অভীষ্ট এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে কলম তুলে নিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক এই লেখক একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ভাষাবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে রাঢ়িখাল গ্রামে, যার কথা পরবর্তীতে তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে উঠে এসেছে। ম্যাট্রিকুলেশন ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমূহ নারীবাদকে তুলে ধরেছে ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রবল বিরোধিতা করেছে, যার ফলে তিনি একশ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই এর মধ্যে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ', 'সব কিছু ভেঙে পড়ে', 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' ইত্যাদি উপন্যাস ও 'অলৌকিক স্টিমার', 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'নারী' প্রবন্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল এই দেশে। প্রতিভাবান এই সাহিত্যিক ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক' সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন হুমায়ুন আজাদ।