কবির মনের কথা: আমাদের সমাজে বই পাঠকের সংখ্যা একেবারে কম নয়।অনেক সময় পাঠকরা আমাকে একটা প্রশ্ন করে থাকে। এতো ব্যাস্ততার মধ্যে কবিতা কিভাবে লিখি।কখন লিখি। কবিতা লেখার কারণ কী? নানান বিষয়ে প্রশ্ন, সত্যিই আমিও ভাবি তাঁদের মতো করে।কিন্তু বিষয়টি ভাবতে গিয়ে তাঁদের সেই প্রশ্নের উত্তর আমাকে আরো আন্দোলিত করেছে এবং প্রশ্নগুলো তাড়া করেছে দীর্ঘদিন। নিজেকে বহুত প্রশ্ন করার পর শেষে উত্তর খুঁজতে গিয়ে যা পেলাম তা হলো- মনের অজান্তেই একদিন কল্পনার ছলে ভাবতে থাকি এবং অল্প কথায় অনেক সুন্দর মনের ভাব প্রকাশ করা যায় কি ভাবে। এ থেকেই মূলত আমার কবিতা লেখার উৎস। কবিতার মাধ্যমে মানুষের মনের কথা, দেশ- জাতি এবং সমাজের কথা, সহজ সরলও প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশ করার একটা সুন্দর মাধ্যম। কবিতা কখন লিখি:এটা আমার একটা বড় বিষয় এবং ট্রাজেডি। যখন মনে ভিষণ কষ্ট আসে এবং,কোন অদৃশ্য বিষয়ের স্বীকার হয়,এবং নৈতিকতাহীন কোন কাজ, অনাচার অবিচার, অত্যাচার নজর কাড়ে কাহারো দুঃখ-বেদনা দেখি। তখন টগবগিয়ে কলমের ডগায় কবিতার ছন্দ আসতে থাকে আমার কল্পনার ভূবনে। আর সেই সময়টি হোক রাতের প্রহর,দিনের শুরু বা শেষ। নির্জন সময়ে আমি কবিতার জন্ম দেয় এবং অংকন করি তার রূপ চিত্র। তারপর সময় করে -থাকে অলংকৃত করি।পোশাক- আশাক পড়িয়ে মনের আয়নায় তার রূপের-ছবি দেখি।একটা সময় বিচ্ছিন্নতার মধ্যে লেখা লিখতাম যত্রতত্র। একদিন মনে হল জীবনের স্রোতময় দিনগুলিতে যে প্রবাহ বইছে সেই স্রোতধারা একদিন থেমে যাবে। হয়ত আমি থাকবোনা পৃথিবী লোকে।আমার স্মৃতিময় দিনগুলোকে ধরে রাখার জন্য আমার লালিত "কবিতাগুলো" মলাট লাগানো দরকার। সে থেকেই বই প্রকাশের আরেকটা স্বপ্নদেখি এবং আত্নবিশ্বাসী হয়ে দিনক্ষণ গুনতে থাকি।কারণ আমি যে পেশায় নিয়োজিত ছিলাম সেটা একটা ব্যস্ততম পেশা এবং নানাবিধ বাঁধার কারণে ঐ সময় কবিতার জন্মকে প্রকাশ করতে পারি নাই।মনের গহীনে চাপা পড়ে কবিতা গুলো কাতরাচ্ছিলো। তাঁদের রেখে ছিলাম মনের শিকলে আবদ্ধ। সেই লালিত সন্তান গুলোকে ২০২৩ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে" সপ্ত রঙের ফানুস" নামে স্বীকৃতি দেয় আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলা একাডেমিরঘ প্রাঙ্গণে। তাঁদের মোড়ক উন্মোচন হল বিশিষ্ট কবি আসলাম সানি কতৃক। নিজেকে অনেক আন্দোলিত হয়েছে। একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস মনের সুখে ফেলতে পেরেছি। কিন্তু ঐ সময়টা আমার কাছে একটা কঠিনতম সময় মনে হয়েছে। সময় স্বল্পতা, তখন কিছুই বুঝিনা কাকে দেখাব নব্য কবিতাগুলো,কী করব বুঝে উঠতে পারিনি।তবু থামেনি নিজে নিজে সমস্ত বিষয়াদী সামাল দিয়ে অভিষ্ট লক্ষ্য মাত্রাঠর দ্বারপ্রান্তে পৌছেছি,শুধু ইচ্ছা শক্তির বলয়ে।আমার কবিতার প্রণয়ে আমি বাস্তব মুখি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করি এবং তুলতে পছন্দ করি। হয়ত মনের অজান্তে আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলও থাকতে পারে।যা পাঠক সমাজ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কবিতার মাধ্যমে মানুষের ভাল-মন্দ, সমাজ সংস্কার, এবং যুব সমাজের বৈচিত্রময় চিত্র, এবং কিছু অমানুষের মুখোশ উন্মোচন সহ সামাজিক পরিবেশ গঠনে সময়ের প্রয়োজনে সবকিছুর একটা মেসেজ দিতে আমার লেখা অব্যাহত থাকবে।আমি পাঠকদের জন্য কবিতার মাধ্যমে কিছু বাস্তবিক গল্প- কল্পনার জগতে রেখে যেতে চাই। পাঠক আমার বাস্তবতাকে পছন্দ করে এতেই আমি স্বার্থক।হয়ত কোন কোন লেখা বিচ্ছিন্নতার কারণে পুনরাবৃত্তি মনের অজান্তে হতে পারে এটা ও পাঠক কাকতালীয় ভাবে আনন্দের ছলে দেখবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমার একটা কবিতা হবে একটা গল্প, হবে একটা ড্রামা-এবং শৈল্পিক চিত্র।মানুষ হৃদয়ে ধারণ করবে উল্লসিত চিত্তে। সেই প্রত্যাশা আমার অবিরত। পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাক ,প্রতিটি কবিতার লাইন। হয়ে যাক একটা কল্পরাজ্যের গল্প একটা স্মৃতিময় স্বপ্ন। ভালবাসার আবিরের ফোটা হবে একটা রক্ত রাঙা তাজা গোলাপ, যা মানুষের মনকে করবে আন্দোলিত প্রতিটি মুহূর্ত এটাই আমার একমাত্র প্রত্যাশা। .....কবি -জিল্লুর রহমান
কবি পরিচিতি মোঃ জিল্লুর রহমান পেশায় একজন এনজিও কর্মকর্তা। শত ব্যস্থতার মধ্যেও তার আবেগ প্রবণ মন কবিতার ছন্দে নেচে উঠে। সত্যিই সে একজন কবি প্রিয় মানুষ। তিনি কবিতা লিখেন ৯০ দশকের শুরুতে কিন্তু প্রথম কবিতা প্রকাশ হয় সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘‘নোলক’’ এ ২০০৩ সালে অরুয়াইল থেকে। সেই থেকে লিখতে চলেছেন বিভিন্ন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতায়। পত্রিকা গুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য: দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাসিক সূর্য্য শপথ, পাক্ষিক নরসিংদী, তিতাস, মুক্তকন্ঠ ও প্রজাবন্ধু। তাছাড়া স্বপ্নের সিড়ি,লঙ্গন ও শুভ্র আত্নার মানুষ ম্যাগাজিন এ। কবি একটি বৃহত্তর এনজিও কুমিল্লা প্রশিক্ষা - ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল এবং SSJS ও JUSS নামের এনজিওতে ১৯৯৭-সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন। তারপর দারিদ্র বিমোচনের সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে অভিষ্ঠ জনগোষ্ঠির কল্যাণে MRA কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত মাইক্রো ফাইনান্স ইনষ্টিটিউট-সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সুক) এ ২০০১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাছাড়া তিনি ক্ষুদ্রঋণ, স্বাস্থ্যশিক্ষা, স্যানিটেশন, ও Credit Related Accounts Management এর উপর প্রশিক্ষণ Save The Children (USA) ও CDF-Dhaka কর্তৃক বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কবি জিল্লুর রহমানের জন্ম-১৯৭১ সালে সরাইল থানার অন্তর্গত কালীকচ্ছ ইউনিয়নের বৃহত্তর ধর্মতীর্থ অঞ্চলের চাকসার (দৌলতপাড়া) গ্রামে। পিতা মরহুম আব্দুল কাদির ও মাতা মরহুমা ছখিনা খাতুন। তিনি চার সন্তানের জনক। জিল্লুর রহমানের এটিই প্রথম কাব্য গ্রন্থ।