নাম তাঁর মওলানা ভাসানী। রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দশকের পর দশক। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলটির জনক তিনি। কেউ তাঁকে বলেন মজলুম জননেতা, কেউ বলেন চাষি-মজুরের বন্ধু, কারও চোখে তিনি ধ্বংস বা বিক্ষোভের কারিগর। তাঁকে নিয়ে আছে অনেক জিজ্ঞাসা তিনি ধর্মগুরু না কমিউনিস্ট, শান্তিবাদী না নৈরাজ্যবাদী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন না খামখেয়ালি। তাঁকে ঘিরে আছে অদ্ভুত রহস্যময়তা। বর্ণাঢ্য তাঁর জীবন। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় তাঁর ভক্ত জুটেছে অগুনতি। অনেকে শত্রু হয়েছেন। রাজনীতিতে পছন্দ-অপছন্দ থাকে। প্রশ্ন হলো, তাঁকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, প্রতিপক্ষ কোনো রাজনৈতিক দলের চশমা পরে, না কি মুগ্ধ ভক্তের চোখে? যুক্তিহীন বিরোধিতা আর অন্ধ ভালোবাসার বাইরে গিয়ে তাঁকে দেখার চেষ্টা হয়েছে এই বইয়ে। সঙ্গে উঠে এসেছে টালমাটাল একটা সময়। এটি মওলানার জীবনীগ্রন্থ নয়, বরং সময়ের দলিল, নিকট অতীতের আখ্যান, ইতিহাসের ছেঁড়া পাতা। মওলানা এ সময়ের রাজনৈতিক মঞ্চের এক দাপুটে চরিত্র। তিনি ক্ষমতার রাজনীতির বাইরে থেকেছেন। জোটেনি রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য। সাদামাটা জীবনযাপন করে জন-আলোচনার শীর্ষে থেকেছেন বরাবর। এই ভূমিপুত্রকে নিয়ে লেখা হয়েছে এ বই, যেখানে উঠে এসেছে নানা বৈপরীত্যে ভরা এক মহাজীবন।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত মহিউদ্দিন আহমদের বই ‘এক-এগারো’ও তার পূর্বে প্রকাশিত বইগুলোর মতো পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, দিয়েছে জানা-অজানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল ও এর সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের সম্বন্ধে জানতে, বুঝতে এবং অনুসন্ধানী তথ্য পেতে তার বইয়ের তুলনা হয় না। মহিউদ্দিন আহমদ এর বই সমূহ হলো বিষয়ভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ, যেগুলোতে লেখক নিজের বিশ্লেষণী জ্ঞান কাজে লাগিয়ে কোনো একটি বিষয়ের গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করেছেন, তার সাথে জড়িতদের থেকে তথ্য নিয়েছেন, মিডিয়া গবেষণা করেছেন এবং বিস্তর তথ্যা ঘেটে সবচেয়ে প্রামাণ্য তথ্যটুকুই দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ‘বাঙালির জাপান আবিষ্কার’, ‘ইতিহাসের যাত্রী’, ‘রাজনীতির অমীমাংসিত গদ্য’, ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’, ‘বিএনপি: সময়-অসময়’, ‘আওয়ামীলীগের উত্থানপর্ব: ১৯৪৮-১৯৭০’, ‘আওয়ামীলীগ: যুদ্ধদিনের কথা’, ‘এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল’, ‘আলোকিত মানুষ’, ‘এ্যালান পো’র শ্রেষ্ঠ গল্প’, ‘বোমা বন্দুকের চোরাবাজার’, ‘Seoul Diary’, ‘Elegy and Dream’- এর মতো পাঠকপ্রিয় বই নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদ এর বই সমগ্র। মহিউদ্দিন আহমদ ১৯৫২ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শিক্ষাজীবনে জড়িত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সাথেও। ১৯৭০ সালের ডাকসু নির্বাচনে মুহসীন হল থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরের বছর মুক্তিযুদ্ধে তিনি ‘বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট’ এর হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে দক্ষিণ কোরিয়ার সুংকোংহে বিশ্ববিদ্যালয়ে এনজিও স্টাডিজ নামক একটি বিভাগের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। কর্মজীবনে তিনি দৈনিক গণকণ্ঠে কাজ করেছেন। বর্তমানে নিয়মিত কলাম লিখছেন প্রথম আলো পত্রিকায়। তার লেখা অধিকাংশ বই-ই প্রকাশিত হয়েছে প্রথমা প্রকাশন থেকে।