বিচিত্রতায় ভরা লেখাগুলো আইনি ফ্রেমে বাঁধার আরও কয়েকটি দিক আছে। এক. আইন মূলত সমাজের মানুষের আচরণ এবং ব্যবহার। প্রাচীন হিন্দু আইনবিজ্ঞানে ব্যবহারকে আইনের উদ্গাতা বলে মনে করা হয়েছে। সেখান থেকে এসেছে আইনকে প্রক্রিয়া হিসেবে দেখার চল। এভাবে আইন হয়েছে একটি আচার বা সংস্কৃতি। আমরা প্রায়ই বিচার-আচার শব্দটি ব্যবহার করি। দুই. আইন ভাষার মাধ্যমে কাজ করে। তাই আইন পঠন, লিখন ও বলনের একটা নিজস্ব ভঙ্গিমা আছে, যার চরিত্র কোনো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বুনিয়াদের উপর নির্ভর করে। লরেন্স রোজেন তাঁর সংস্কৃতি হিসেবে আইন: একটি আমন্ত্রণ (প্রিন্সটন, ২০০৬) বইয়ে বলেছেন যে, আইন হলো সংস্কৃতির নিজস্ব শৃঙ্খলা-দর্শন প্রকাশের ভঙ্গি বা মাধ্যম। এই বইয়ের বিষয়বস্তু আইনিভাবে বহুমাত্রিক ও সামাজিকভাবে বিস্রস্ত। কিছু বিষয় সময়ের চাকায় নতুন মাত্রা পেয়েছে, তবে অপ্রাসাঙ্গিক হয়ে যায়নি। নির্দিষ্ট কোনো যুক্তি বা ধারা আমি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইনি এখানে। তবে ঘুরে ফিরে আইন, ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ মানস, সংস্কৃতি ও সম্পর্ক এখানে বারেবারে এসেছে। আমি আইনের ছাত্র। সে হিসেবে চারপাশে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোতে আইনি ভাবনা প্রযুক্ত করতে চেয়েছি। অথবা বলা যায়, আমাদের ভাবনার যে অচলায়তন সেখানে বিচলন ঘটাতে চেয়েছি। বিভিন্ন লেখার শেষভাগে আমি যেসব বই বা উপাদান পড়ে ঋদ্ধ হয়ে ওই লেখাটি লিখেছি তার একটা তালিকা যুক্ত করেছি। এটা গবেষণা নিবিষ্টতা প্রমাণের জন্য নয়। আমি চেয়েছি সাধারণ ঢঙে একটু আমুদে বাঙলায় আমাদের পরিচিত বিষয়গুলোকে নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হতে। আবার এটিও চেয়েছি যে, আগ্রহীজন যেন জ্ঞানের নতুন একটা ধারা আবিষ্কারের রসদ পান। আনন্দের মাধ্যমে আইনি চিন্তাকে সমাজ ও সংস্কৃতি মানসে যুক্ত করতে আমার ভালো লাগে। আইনকে আমি সংস্কৃতি হিসেবে দেখি।
ড. বিল্লাহ আইনের শিক্ষক। তবে তিনি আইনকে আইনের খোলসমুক্ত করার কাজে আছেন। তাঁর আইনি মানসে ও ব্যাখ্যায় মানুষের অশ্রু, ঘাম আর রক্তের দরদ টের পাওয়া যায়। পড়াচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভূমি আইনের রাজনীতি ও কৃষকের দারিদ্র নিয়ে পিএইচডি করেছেন নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটন থেকে। তাঁর অভিসন্দর্ভটি ২০২১-এ বই আকারে প্রকাশ হয়েছে ইউপিএল থেকে। বিদগ্ধ মহলে বইটি আদৃত হয়েছে। আইনকে কড়কড়ে দারুন পরিশীলিত বাংলায় প্রকাশ করে লিখেছেন "আইনের ভাব ও অভাব" নামে আরেকটি বই (পলল, ঢাকা, ২০১৯)। ধর্মীয় অনুভূতির সাংবিধানিক স্বরূপ নিয়ে বাংলাদেশ অধ্যায় লিখেছেন হার্ট থেকে প্রকাশিত এবং প্রফেসর থিও লি এন এবং জ্যাকলিন নিও সম্পাদিত 'রিলিজিয়াস অফেন্সেস ইন কমন ল এশিয়া' বইয়ের। দেশি বিদেশী জার্নালে প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার, লিগ্যাল হিস্ট্রি ও সংবিধানিকতাবাদ নিয়ে গোটা দশেক গবেষণা প্রবন্ধ। বক্তব্য দিয়েছেন ভারত, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, আমেরিকা এবং থাইল্যান্ডে। ২০১৯ সালে আমন্ত্রিত ভিজিটিং স্কলার হিসেবে গিয়েছেলিন দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেলেনবশ ইউনিভার্সিটিতে। টিভি টক শো ও পত্রিকায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানান ইস্যুতে থাকছেন সরব।