প্রবাসের ব্যস্ত সময়ের টুকরো টুকরো অবসরে ভেসে ওঠে স্বদেশের মায়াভরা সোনালি দিনগুলো। বাংলার সবুজ পাতাগুলো যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে, আয় আয় সোনার ছেলে ফিরে আয়। কিন্তু বাস্তবতার এক অমোঘ বিধানে ছুটে যেতে কষ্ট হলেও মনটা ঠিকই ওই ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধের সঙ্গে লেপটে থাকে। প্রতিটি মুহূর্ত অনুভবে কাটে বেড়ে ওঠার দিনগুলো। আজ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ালেও আমার মাটির মায়া জড়িয়ে আছে মনের গহিনে। তাই তো মনে পড়ে অনুক্ষণ। নানা দেশের নানা সংস্কৃতি, রীতিনীতি দেখছি, অভিজ্ঞতার ঝুলি দিনে দিনে ভারী হচ্ছে। আর প্রতিটি পটদৃশ্য মেলাতে চেষ্টা করি নিজের দেশ—মাটি—সংস্কৃতি ও জীবনের সঙ্গে। অবচেতনে যেন মনের গভীরে রেখাপাত হয়ে যায়, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে কতটুকু তাল মিলিয়ে চলছি অথবা এগিয়েছি। আবার এমন কথাও মনে হয়, আমাদের শৈশবের গ্রামীণ আবহাওয়া আর আজকের উন্নত জীবনযাপনের মধ্যে কোনটা বেশি আনন্দময়। সেই শৈশবে গ্রামের হাটে গিয়ে ধুলাওড়া রাস্তায় বসে যেমন সেরদরে বিক্রি করা গরম গরম লাল আটার রুটি আখের গুড় দিয়ে মজা করে খেয়েছি; তেমনি হায়াত রিজেন্সি অরল্যান্ডোতে টমেটো আর অলিভ দিয়ে মেডিটারিনিয়ান স্টাইল বেকড গ্রুপার মাছ খেয়েছি, গ্রিল্ড ফ্লোরিডা লবস্টার খেয়েছি, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার চত্বরে খাঁটি ফ্রেঞ্চ খাবারও খেয়েছি। বয়সে বড় গ্রামের অশিক্ষিত বন্ধুকে যেমন মনে রেখেছি, তেমনি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াতে অধ্যাপক বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইনে বা মুখোমুখি আড্ডায় চমৎকার সময় কাটে। সময় যেভাবেই কাটুক, সাত সমুদ্দর তেরো নদী পাড়ি দিয়ে প্রবাসে বাস করলেও আত্মাটা তো সেই জন্মভূমির মাটিতেই প্রোথিত। আর তাই কলম হাতে জীবনের ছবি অঁাকার চেষ্টা করি। জীবন বাস্তবতার বিভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতাগুলো ধরে রাখার এই প্রচেষ্টা সার্থক হবে তখনই, যখন আমার লেখা পাঠক—পাঠিকা উপভোগ করবেন, আমার সঙ্গে তারাও চড়বে সুখ—দুঃখ হাসি—কান্না, কখনো মজা কখনো কঠিন বাস্তবতার নাগরদোলায়। আমার এই প্রচেষ্টায় যারা বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে আমার স্ত্রী আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও আমার প্রিয় পাঠক—পাঠিকা সবসময় প্রেরণা দিয়ে থাকেন লেখালেখির জন্য, তাদের জানাই ধন্যবাদ। জ্ঞান প্রকাশনীর জনাব শহীদ হাসান তরফদারের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সবশেষে পাঠক—পাঠিকাদের প্রতি অনুরোধ, ছাপাখানার ভূত মানে যদি কোনো ভুলত্রুটি চোখে পড়ে তা অনিচ্ছাকৃত। কে না চায় তার প্রচেষ্টা নিখুঁত হোক। তারপরও যেকোনো ভুলত্রুটির জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সাদিকুল আওয়াল মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
পেশায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হলেও সাদিকুল এর মনটি সাহিত্যমুখী। দীর্ঘদিন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বাস করলেও তার আত্মা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচেই রয়ে গেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এমএসসি পাশ করেছেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য থেকে আরও একটি মাস্টার্স আর অস্ট্রেলিয়া থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। বর্তমানে মেলবোর্নের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনি বেলজিয়াম আর চীনেও স্বল্প সময়ের জন্য পড়াশোনা করেছেন। অস্ট্রেলিয়া অভিবাসনের আগে বাংলাদেশে থাকাকালীন তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ডিসিপ্লিনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্মজীবনে ব্যস্ত থাকায় আর সেইসাথে লেখাপড়া এবং গবেষণার নেশায় তিনি লেখালেখির জগতে অনেক দেরিতে এসেছেন। তার লেখা ' প্রবাসে আমরা' আর ' বহে সমান্তরাল ' বই দুটি প্রকাশের সাথে সাথেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার স্বপ্ন তরুণ প্রজন্মের জন্য কিছু একটা রেখে যাওয়া। এই প্রয়াসে তার লেখালেখি।