'আবেগে রক্তক্ষরণ নয়, কোন গোপন হাসি নয়, অখণ্ড অবসরে অনুভব দিও, বিশ্বাস দিও, শুধুই বিশ্বাস দিও।' আমাকে বিকল্প কোনো এক ধরিত্রী দাও যেখানে চিরহরিৎ স্বর্গ আছে। এমন বাক্য চয়নে কবির মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন কবি আমজাদ হোসেন। 'হৃদয়' তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। তিনি চৈত্রের উত্তাপকে হৃদয়ের উষ্ণতায় ভাসিয়ে তাঁর কাব্যের বারতা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর কবিতা মৌলিক চিন্তা-ভাবনার স্বাক্ষর বহন করে। 'হৃদয়' কাব্যগ্রন্থের কবিতা আহরিত উপলব্ধির ভেতর দিয়ে একজন কবি তাঁর হৃদয়ের গুপ্ত ভালোবাসা এবং নিজের আত্মবিশ্বাসকে নিঃসংকোচে বলতে চেয়েছেন। আমজাদ হোসেন একজন কবি, একজন শিক্ষক। বাংলাদেশ জন্মের সময়ে রামু উপজেলার 'ঈদগড়' ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত শিক্ষক পরিবারের তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা সুলতান আহমেদ মাস্টার একজন মানবিক, নান্দনিক, নিবেদিত শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের বাড়ি ছিল শিক্ষার বাতিঘর। রামু উপজেলার দুর্গম অঞ্চল ঈদগড় ইউনিয়নে নিবেদিত চিত্তে আমৃত্যু শিক্ষার জ্যোতি ছড়িয়েছিলেন তাঁর বাবা। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে শুধু শুরু হয় আমজাদ হোসেনের লেখার হাতেকড়ি। প্রচার বিমুখতায় সুদীর্ঘ হয়নি লেখার পথ। যাপিত জীবনে মানুষের অপকৌশল, প্রতিহিংসা, মায়া ও বহুমুখিতা তাঁকে গভীরভাবে আহত করে। বেদনাহত এ উপলব্ধি কবিতার পরতে পরতে। হৃদয়বান ও হৃদয়হীনতাকে রূপ-বসে চিত্রিত করেছেন। তাঁর কবিতা পাঠকের মনোজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। পাঠকের বোধকে জাগ্রত করবে। পাঠক 'হৃদয়' কাব্যগ্রন্থে আনন্দ ও হৃদয়ের বিত্রিত কথন অবগাহন করবে। তাঁর কবিতায় পরিচিত শব্দ কাব্যময় হয়ে ইতিবাচক চিন্তার ইঙ্গিত বহন করেছে। কবি আমজাদ হোসেন-এর শব্দ বিন্যাস, নিজস্ব বিশ্লেষণ, উৎকৃষ্ট উপমা পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে।
আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালে জামাল পুর টাউনে। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান, মাতা খোদেজা খাতুন। ছাতিয়ানতলা প্রাইমারী স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ শুরু। যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন। যশোর মাইকেল মধুসুদন কলেজ (সরকারী) থেকে আইএ ও বাংলা অনার্সে উত্তীর্ণ হন। তিনি অনার্স পরীক্ষা দেন যশোর সেন্ট্রাল জেল ও রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে থাকা অবস্থায়। কলেজে পড়াকালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালের শুরুতে যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে। প্রথমবার তিনি জেলে যান পাকিস্তান রক্ষা আইনে গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৭ সালে। প্রায় ৮ মাস যশোর ও রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে থাকেন। দ্বিতীয়বার তাঁকে জেলে থাকতে হয় কিছু সময়। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) এর সম্পাদক ছিলেন। ৮০ দশকের মধ্যভাগ থেকে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন এবং লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের রাজনৈতিক অর্থনীতি, বাঙালীর ঐতিহ্য বাঙালীর ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস (২ খÐ), বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস, রাজনীতির পাঠ, নকশালবাড়ীর কৃষক আন্দোলন, বর্তমান রাজনীতি, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতি, ত্রিবিশ্বতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রবন্ধ, আলবেনিয়া কোন পথে, পাট সমস্যা, কৃষক সমিতি কাহাকে বলে, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সমস্যা, মৌলবাদ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, দাবী বদলে যায়নি (৫ খণ্ড), সমাজ ও ধর্ম, মওলানা ভাসানীর জীবন ও রাজনীতি, সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন ও রাজনীতি, মানবেন্দ্রনাথ জীবন ও রাজনীতি, মৌলবাদ ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, মহাপণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের জীবনী, উপন্যাস সমগ্র (২ খণ্ড), ভাগ্যবতী ও অন্যান্য নাটক, সূর্য শপথ, ফেরা, রহিমা, চকলেট ও অন্যান্য গল্প, দশটি ছোট গল্প, ব্যঙ্গ নাটক, নন্দিনী, ভিতুর ডিম, তিনটি প্রবন্ধ ইত্যাদি।