সৃজনশীলতার নিরন্তর পরিব্রাজক ও শব্দসাম্রাজ্যে ডুবে থাকা দরিয়া পাড়ের শব্দকৃষক কবি মনজুরুল ইসলাম। তাঁর এ বিরল ‘জাতিপুত্র’ গ্রন্থখানি কবি হুদার কাব্যিক দর্শন ও অর্জন সংক্রান্ত বিস্ময় ‘কাব্যকোষ’ যা বাংলা কাব্যসাহিত্যে অভূতপূর্ব এক মন্দ্রিত সংযোজন ও নান্দনিক সৃষ্টিকর্ম। শঙ্কাকুল বিলোড়িত জীবনের ক্রূরাক্রান্ত বাঁকে বাঁকে এ‘জাতিপুত্র’ যেন দীঘল ছায়ামাখা এক আকাশনামা প্রশান্ত সরোবর! এ গ্রন্থের কবিতাগুলো উপমায় উৎপ্রেক্ষায়, অনুপম চিত্রকল্পে-বিচুর্ণ রূপকল্পে-অনাস্বাদিত শব্দবন্ধে-অতুল বুননে-প্রেমার্ত চয়নে বিস্ময়করভাবে মনোমুগ্ধকর, চিত্তাকর্ষক, হৃদয়গ্রাহী ও অপূর্ব সৃজন মুগ্ধতায় সিক্ত। ঐতিহ্যস্নাত জন্ম-জনপদের এ ‘জাতিপুত্র’ নাড়ির নিবিড় টানে ও অটুট বাঁধনে ফুটে ওঠেছে কবি মনজুরের সর্বৈব মুগ্ধময় কবিতার দীর্ঘআঙ্গিকের কুশলী অন্তর্বয়নেযেখানে অঝোর শব্দপ্রবাহ সমুদ্রের মতো মুখর ও বহুমাত্রিক বিভোর স্বরে প্রাণময় গীতল চিত্রে পরিপূর্ণ। কবি মনজুরুল ইসলাম শব্দচয়নের দিকে আবাল্য যথেষ্ট সচেতন। প্রমূর্ত কাব্যের শরীরকে অপূর্ব লাবণ্যময় করে তুলতে তিনি পারঙ্গমÑশব্দ, উপমা, রূপকের ব্যবহারে সফল ও সার্থক। কবির কবিতায় বহু বর্ণিল মুগ্ধময় চিত্রকল্প যেমন ভিন্ন মাত্রায় এসে হাজির হয়, তেমনি অনিবার্য শব্দ ও পদের ব্যবহারও ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করে। তিনি বিশেষণ, সর্বনাম, ও অব্যয় পদকে নতুন নতুন রূপ ও স্বরূপের মেদুর মুগ্ধতায় ছড়িয়ে দিয়েছে প্রতিটা কবিতায় যা ফুটে ওঠে স্বতঃস্ফূর্ত বিচ্ছুরিত হাজারো বর্ণে। ফলে, তাঁর কবিতা পলকেই হয়ে ওঠে মৃন্ময় স্থানিক থেকে প্রেমার্ত বৈশিক।