অজস্র গল্প ছড়িয়ে আছে আমাদের চারপাশে। গল্প আছে আমাদের সবার জীবনেই। তবুও আমরা গল্প শুনতে চাই, জানতে চাই, পড়তে চাই। যখন কোনো গল্পে শনাক্ত করি, আরে, এ তো আমার নিজের অভিজ্ঞতারই অনুরূপ; কিংবা এমনি ঘটনা ঘটে দৈনন্দিন জীবনে, যদিও তা নজর করা হয় নি সেভাবে; অথবা এমনও যে ঘটতে পারে সেটা ভাবা হয় নি ইতিপূর্বে; গল্পটা তখন মন ছুঁয়ে যায়। গল্পের আবেদন এমনই-শাশ্বত। আর গল্পের প্রতি মানুষের টানটাও সহজাত। মাজহারুল ইসলাম গল্প লিখেন গল্পের মতো করেই গল্প থাকে সেখানে। নিটোল গল্প। ভাষার ভারিক্কি কিংবা নিরীক্ষার ঝক্কি তাতে নেই। সরল, সপ্রাণ, মেদহীন, ঝরঝরে গদ্যে গল্প বলে যান তিনি। ক্লান্তি ভিড়তে পারে না পাঠকের করোটিতে। বরং পাঠককে তিনি এক আনন্দভ্রমণে নিয়ে যান, দাঁড় করিয়ে দেন জীবনের নানা চৌকাঠে। পাঠক অভিভূত হন, আপপ্রুত হন ভ্রমণ শেষে। মাজহারুল ইসলামের গল্পগুলো এভাবেই স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। প্রথম গল্পগ্রন্থ ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার গল্প’র মধ্য দিয়ে যে প্রশংসা অর্জন করেন মাজহারুল ইসলাম পাঠক ও বোদ্ধা উভয়ের কাছ থেকে, তা আরও বিস্তৃত হয় তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘জালাল মাস্টারের সংসার’ প্রকাশের পর। আশা করা যায়, তৃতীয় এ গল্পগ্রন্থ ‘মৃতের পাসপোর্ট’ ও একই রকমভাবে সমাদৃত হবে।
স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত নানা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় যুক্ত হন গ্র“প থিয়েটার আন্দোলনে। এসময় তিনি মুদ্রণ ও প্রকাশনাশিল্পের সঙ্গেও জড়িত হন অপেশাদার হিসেবে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের কয়েক বছরের মধ্যেই ১৯৯৬-এর জানুয়ারিতে পাক্ষিক ‘অন্যদিন’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার মাধ্যমে শুরু হয় এক নতুন যাত্রা। পরের বছর সৃজনশীল প্রকাশনায় উৎকর্ষের সন্ধানে শুরু করেন ‘অন্যপ্রকাশ’। বই প্রকাশে পেশাদারিত্ব আর মুদ্রণ ও বিপণনের আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে অল্প সময়েই তা মনোযোগ আকর্ষণ করে সবার। বাংলা ভাষার সবচেয়ে জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সকল বই এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রকাশের ফলে একটা অভিনব জুটি তৈরি হয়, লেখক-প্রকাশক জুটি। দুই দশক ধরে লেখালেখি করছেন। তাঁর মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা ৬টি। এরমধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ ‘ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার গল্প’ ও ‘রুম নম্বর বত্রিশ’, ভ্রমণগ্রন্থ ‘হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে নয় রাত’, ‘সিকি শতাব্দী আগে : বজ্র ড্রাগনের দেশে’ ও ‘গ্যাংটকে গ্যাঁড়াকল দার্জিলিংয়ে কোলাহল’ এবং স্মৃতিকথা ‘হুমায়ূন আহমেদের মাকড়সাভীতি ও অন্যান্য’। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘আনিসুজ্জামান : দীপ্র মনীষা’ এবং ‘সৈয়দ শামসুল হকের কলমের সঙ্গে সংসার’সহ সম্পাদনা গ্রন্থ নয়টি। ছোটপর্দায়ও রয়েছে শিল্পিত পদচারণা। তাঁর পরিচালনায় নির্মিত পাঁচটি টিভি নাটক, একটি টেলিফিল্ম ও একটি ৫৫ পর্বের ধারাবাহিক নাটক দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি, এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ঢাকা মহানগর কমিটির বর্তমান সভাপতি। তিনি সিটি ব্যাংক আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গের প্রথম আলো সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। স্ত্রী তানজিনা রহমান স্বর্ণা ও দুই পুত্র অমিয় মাজহার-অন্বয় মাজহারকে নিয়ে তাঁর আপনভুবন।