"আমার পড়া লেখা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ‘আমার বয়স তখন মাত্র এগারাে, তার বেশি নয়। ওইটুকু বয়সেই লেখক হবার বাসনা আমাকে পেয়ে বসল আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই ইচ্ছেটা আমার লক্ষ্যে পরিণত হলাে। কিন্তু বালক বয়সের ভি, এস, নাইপলের জন্য লেখক হবার ইচ্ছা আর সে ইচ্ছা পূরণের মাঝে বিস্তর ফারাক ছিল। লেখক হবার জন্য তাকে তিনটি ভিন্ন প্রকৃতির সংস্কৃতিকে বােঝার উপায় খুঁজে বের করতে হয়েছে। এই তিনটি ভিন্ন সংস্কৃতির উৎস হলাে নাইপলের পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিতে রয়ে যাওয়া আধা বিস্মৃত জন্মভূমি ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ঔপনিবেশিক সমাজ যেখানে নাইপল বেড়ে উঠেছে, আর ইংরেজি উপন্যাসের মাধ্যমে পরিচিত সম্পূর্ণ ভিন দেশি জগৎ। সাহিত্য নির্ভর আত্মজীবনীর এই রচনায় ভি. এস. নাইপল ত্রিনিদাদে কাটানাে তার ছেলেবেলার স্মৃতি, ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবন আর তার লেখালেখির একেবারের প্রথম দিকের প্রচেষ্টার স্মৃতিগুলােকে আলাদা আলাদা ভাবে নিরীক্ষণ করে উপস্থাপন করেছেন। এই নিরীক্ষাধর্মী লেখায় ফুটে উঠেছে তার জীবন ও লেখালেখি কেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রচেষ্টা যা ছিল তাঁর কল্পনা জগৎ এবং লেখক হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনের মূল চালিকা শক্তি যুগে যুগে বিভিন্ন বিজেতার হাতে নিগৃহীত ভারতের রুগ্ন পরিস্থিতি, পরাজয় আর ধ্বংসের যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি যা কিনা দেশ ও দেশের মানুষকে গদ্যের মাধ্যমে তুলে ধরতে তাঁকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে সেদিকেই তিনি বিশেষ মনােযােগ দিয়েছেন। ব্যক্তিগত অথবা ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা এবং সাহিত্য ধারার মাঝে যে সম্পর্ক তা নিয়ে নাইপলের প্রগাঢ় অভিব্যক্তির বহির্থকাশ ঘটেছে এই রচনায়। আর এর মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে যে তিনি কীভাবে নিজের লেখক কণ্ঠ আর লেখালেখির বিষয়বস্তু আবিষ্কার করেছেন, কীভাবে তিনি কখনাে কথাসাহিত্য আবার কখনাে বা ভ্রমণকাহিনির মাধ্যমে নিজের কণ্ঠ আর বিষয়বস্তুকে সততার সাথে উপস্থাপন করেছেন। নিজের রচনার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যের একটি শক্তিশালী ধারা হিসেবে উপন্যাসের আত্মপ্রকাশ, ঊনবিংশ শতকের সামাজিক অবস্থার বর্ণনা ও ব্যাখ্যায় উপন্যাসের অত্যাশ্চর্য উন্নয়ন এবং বিংশ শতকে উপন্যাসের ক্ষমতার বিবর্তনের সুনির্দিষ্ট চিত্র এঁকেছেন। সেইসাথে উপন্যাসের চলচ্চিত্রমুখী হবার দিকেও তিনি তাঁর অন্তদৃষ্টির প্রকাশ ঘটিয়েছেন।