তনুর গায়ে রঙ হলুদ কাঁঠাল চাপ, মাথায় লম্বা চুল কোমর ছাড়িয়েছে। সব সময় মাঝ বরাবর সিঁথি কেটে খোপা বেঁধে রাখে। মায়া কাড়া চমৎকার একটি মুখ। তনু ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছে। কানে বড় ঝুমকা, গলায় চওড়া হার, মাথায় টিকলি। নাক ফুটা করা হয়নি বলে নথ এবং নথের সাথে টানা পরা যায়নি। অথচ গয়নার মধ্যে তনুর এই নাকের নথটা খুব পছন্দ। কপালে লাল টিপ। ঠোঁটে গোল্ডেন রোজের কড়া টকটকে লাল রঙ-এর লিপস্টিক। লাল রঙ তনুর অসম্ভব প্রিয়। তবে পড়নের গাউনটা ধবধবে সাদা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসেই সে চোখ বন্ধ করলো। আর সাথে সাথেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো তার প্রিয় দৃশ্য। সে একজনের সাথে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে। যথারীতি তনু মানুষটার হাত ধরে আছে। তার দু'হাতই পেছনে। মাথায় ক্যাপ, গায়ে জ্যাকেট। তনু তার দিকে তাকালো। মানুষটার কানের পাশে ক্যাপের নিচ থেকে বেরিয়ে আসা কাঁচাপাকা জুলফির চুলগুলোয় নজর আটকে যায়। কিন্তু তনু অনেক চেষ্টা করেও কল্পনায় লোকটির চেহারাটা ঠিক মতো দেখতে পায় না। ঠিক এই সময়টায় তনু ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে। ইশ... ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। অথচ কি চমৎকার স্বপ্ন সে দেখছিলো। অন্যদিন হলে তনু ঠিক আবার শুয়ে পরতো। যেখানটায় স্বপ্ন ভেঙে গেছে ঠিক সেখানটায় আবার জোড়া দিয়ে স্বপ্নের ভেতর ডুব দিতো। হ্যাঁ তনুর এই ক্ষমতাটা আছে। তবে সব সময় না, মাঝে মাঝে এমনটা হয়। কিন্তু আজ? তন ছৌছে ওয়াশরুমে গেলো ফেস হতে।
আফরােজা খানম তন্দ্রা। জন্ম টাংগাইল জেলার পােষনা গ্রামে। শৈশব, কৈশাের কেটেছে টাংগাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ায়। তিন ভাইবােনের মধ্যে সবার ছােট এবং একমাত্র মেয়ে। এসএসসি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং এইচএসসি কুমুদিনী সরকারি মহিলা কলেজ। অনার্স, মাস্টার্স ‘চাইল্ড ডেভলপমেন্ট এন্ড ফ্যামিলি রিলেশনশিপ’ বিভাগ, হােম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে। মূলতঃ এই সাবজেক্টে পড়াশােনা করার দরুণ মানুষের মস্তিষ্কের চেতন, অচেতন এবং অবচেতন এই তিনটা ধাপ সম্পর্কে জানার ও শেখার সুযােগ। হয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ফ্যামিলি কাউন্সিলিং-এর উপর কাজ করার সময় মানুষের অবচেতন মনের হাজারাে লুকায়িত বিষয়গুলাে সম্পর্কে আগ্রহ জন্মে। লেখাপড়া এবং কাজ, এই দু'য়ে মিলেই ‘অবচেতন' গল্পগুলাে সূত্রপাত। আরাে আগ্রহ রয়েছে রিডিং, ট্রাভেলিং, ফটোগ্রাফি এবং ভিন্নধর্মী রেসিপি শেয়ারিং-এ।। ২০১৯ এবং ২০২০ এ প্রকাশিত কয়েকটি গল্পসমগ্রে তার বেশ কয়েকটা ছােটগল্প প্রকাশিত এবং প্রশংসিত হয়েছে।